হরিহরি মিত্র লেনের একচিলতে গলির দোফলতা জমিটাতে দুঘর নিয়ে থাকেন অখিল বাবু। একসময় উত্তর কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন। কিন্তু কোন ভূত চেপেছিল কে জানে সেই চাকরিটা ছেড়ে এখন বাড়িতে ছাত্র পড়ান। একটা বিশাল বড় অ্যাকোরিয়ামে মাছকে দানা খাওয়ান।সময় অসময় কিছুর বাধ্যবাধকতা না মেনে ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়ান।অখিলবাবুর আর একটি নেশা অবশ্য আছে, ইদানিং তিনি এক নতুন ধরনের বাংলা ডিকশনারির পিছনে পড়েছেন। সারাদিন রাত এক করে সেই অভিধানের শব্দ চয়ন ও সমার্থক শব্দ খুঁজতে খুঁজতেই কেটে যাচ্ছে।
অখিলবাবুর এই প্রয়াসটি যে নিঃসন্দেহে নতুন ও আকর্ষণীও তা নিয়ে পাড়ার লোকজনের কোনও দ্বিধা নেই। কিন্তু আড়ালে তাকে নিয়ে খেঁউড় করতে পিছপা হয় না।"খেঁউড়" কথাটায় যেটা মনে পড়ল, অখিলবাবুর এই অভিধানের আসল আকর্ষণটাই বলে হওয়া ওঠেনি।চলতি ফিরতি বাঙালি যে ভাষায় কথা বলে, অখিলবাবু সেই বাংলা নিয়েই তার অভিধান টি বানাচ্ছেন।রাস্তা ঘাটে যেতে যেতে যখনই কোনো শব্দ শোনেন যা সংসদ অভিধানে জায়গা পায়নি, তাই নিয়ে শুরু করেন বিশ্লেষন। নামও ঠিক করেছেন 'অপ্রচলিত বাংলা অভিধান'। এই তো সেদিন কলতলার মোড়ে কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া কে কথা বলতে শুনলেন
-ক্লাসটা সাল্টে ঠেকে চলে আসবি। বাড়িতে হিটলার টা বড় বেগড়বাই করছে। জলদি কাটতে হবে। - কালো করে রোগা ছেলেটা বলে উঠল ।
- তোর মালটার সাথে কি সব কিছু চুলকে গেছে? - আর একজন ইয়ার্কির ভঙ্গি তে প্রশ্ন ছুড়ল ।
অখিল বাবু কে দেখে ছেলে গুলো একজন আরেকজন কে ইশারা করল। কালো মতন ছেলেটা বলল- অখিল দা ডিকশনারি ঠিক চলছে তো?
অখিল বাবু হুম করে চলে এলেন দ্রুত হেটে। তার বিয়ে বার তিন চারেক প্রায় পাকা হবার পর ভেঙ্গে গেছিল। তারপর থেকেই এই ছোকরার দল আড়ালে ডিক-শ-নারি বলে মজা নেয়। সে যাই হোক তার অভিধানের জন্যে অনেকগুলো শব্দ আজ সে পেয়েছে। বাড়ি এসে ফটাফট লিখে ফেললেন শব্দ গুলো।
সাল্টে - পরিসমাপ্তি ।
ঠেক - স্থানীয় এলাকায় বাক্যলাপ করার অস্থায়ী স্থান ।
হিটলার - পরিবার কর্তা ( সাধারণত বাবা) ।
বেগড়বাই - অসুবিধা সৃষ্টি করা ।
কাটা - বিদায় নেওয়া ।
চুলকে যাওয়া - পরিসমাপ্তি ।
মাল - চারিত্রিক বা শারিরিক গঠনগত ভাবে ইতর লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণীয় ব্যক্তি ।
অখিল বাবু তার অভিধানের সব থেকে বড় শব্দ উৎস মানেন আম জনতা । তাই তিনি সময় পেলেই ঘুরে বেড়ান বাজার মাঠ, রাস্তায়, দুদল লোকের মধ্যে যখন ঝামেলা বাধে তখন অনেক অপ্রচলিত শব্দ পাওয়া যায় ।পার্কে সাধারন লোকজনের কথা বার্তা ও আরেক প্রধান উৎস । এভাবে অখিল বাবুর অভিধানগিরি ভালই চলছিল।
এরমধ্যেই ঘটল ঘটনাটা। গনিবাবু এলাকার এক স্বনামধন্য নাগরিক । কলকাতা পুলিসে চাকরি করেন । ঠিক কোন পদে আছেন তা প্রকাশ করেননা কখনই , কিন্তু তার গতিবিধি আর পাঁচটি পুলিশ জনতা থেকে আলাদা। সকালে জগিং পার্কে দেখা হয়ে গেল গনিবাবুর সাথে। অন্যদিন যেমন খোশমেজাজে গল্প করেন, আজ সেই ব্যাপারটা ছিলনা তার মধ্যে । কিছুক্ষণ কথা বলার পর সেটা আন্দাজ করতে পারলেন অখিল বাবু । আপনি আজ কেমন অস্তমিত গনিবাবু , কোনো টেনশন ? - কথাটা জিজ্ঞ্যেস না করে পারলেন না অখিলরঞ্জন । না তেমন কিছু না , এই কাজ নিয়ে তো চাপ থাকেই - কোনও মতে এড়িয়ে যান গনিবাবু ।
এরপর দুকথা পাচকথার মাঝে গনিবাবু নিজেই পাড়লেন কথাটা - আপনি তো মশায় বঙ্গ বিশারদ, দিন না ধাঁধা টা উদ্ধার করে । বেঁচে যাই এ যাত্রা - প্রতাপশালী গনি বাবু বেশ নিরুপায় হয়ে পড়লেন হাবেভাবে ।
খুলেই বলি তাহলে অখিল বাবু -আমাদের পুলিস বিভাগে অনেক সোর্স কাজ করে যারা আমাদের শহরের আনাচে কানাচে ঘট তে থাকা ঘটনার খবর দেয় । বলতে পারেন নিজেদের পকেটের টাকা খরচা করেই এদের পুষতে হয় কিন্তু এদের ছাড়া শহরটাকে বাঁচান যেত না বলতে পারেন । আমাদের একটা বিশ্বস্ত সোর্স ছিল মশায় , সুখেন নাম ছিল ছেলেটার। দমদম চিড়িয়া মোড়ে একটা চা বিড়ির দোকান চালাত ছেলেটা। গতকাল একটা দুর্ঘটনায় ছেলেটা মারা গেছে। কিন্তু আমাদের সবার বিশ্বাস এটা নিছক দুর্ঘটনা না । যাই হোক সেই অনুসন্ধান আমরা করে নেব, কিন্তু আমাদের সমস্যায় ফেলেছে সুখেনের রেখে যাওয়া একটা চিরকুট। ছড়ার ভাষায় কিছু একটা বলতে চেয়েছে ছেলেটা। বেশ রসিক ছিল এমনিতে । চিরকুটটা সেই মজার ছলেই লেখা , আমাদের বিশ্বাস কোনও গোপন খবর রেখে গেছে সুখেন । আমাদের বিশেষ টিম ছড়াটা ডিকোড করার কাজ করছে । এখন অবদি তেমন সুরাহা করা যায়নি। আমাদের ভয় শব্দ ছক ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে না দেরী হয়ে যায় , তাই আমার ইচ্ছে আপনি যদি একবার দেখেন শব্দ ধাঁধা টাকে - এক নিঃশ্বাসে প্রায় শেষ করলেন কথা গুলো গনিবাবু ।
পকেট থেকে একটা সাদা কাগজ লিখা চিরকুট বের করলেন গনি বাবু।
বেদম হয়ে বঙ্কুবাটী
ভাষার হয়ে লম্বা হাটি
শরদ বেলা ঘুঘুর বাসায়
বোতাম গুনে বাঁকা চাঁদ ভাসায়
গ্রহন হলে শতের ভুবু
চুরি বালায় মস্ত বাবু
ছোলা বালা বড্ড তেদর
চমচম খান জামাই আদর
লাইন গুলো পড়ে অখিলবা|বু সহযেই বুঝতে পারলেন যে কোনও সংকেত তো দিব্যি আছেই এবং সুখেন সত্যি বেশ রসিক ছিল। গনিবাবুর থেকে কিছুটা সময় চেয়ে অখিল বাবু তড়িঘড়ি ফিরে এলেন বাড়িতে।
বাড়ি ফিরে এসে মাছগুলো কে চারা খাওয়াতে খাওয়াতে নিজের মনে আওড়াতে থাকেন ছড়াটাকে । কয়েকবার পড়ার পরই অখিল বাবু ধাঁধার আধারে ডুবে গেলেন । প্রথম লাইনে কোনও স্থান বোঝাতে চেয়েছে সুখেন এই এতটুকু সারমর্ম ই পেয়েছেন । জীবনে সত্যজিত ফেলুদা ও কিরীটীর বাইরে কোনও গোয়েন্দা গল্পের প্রতি তার আকর্ষণ বা পড়ে ওঠবার ফুরসত হয়ে ওঠেনি । আর গোয়েন্দা গিরি বলতে রান্না ঘরে ইঁদুর বাহিনীর স্থায়ী বসতবাড়ি খোজ করা । তাই শুরু করবেন কিভাবে আর কিভাবেই বা খুলবেন শব্দের জাল টা ভাবতে থেকেন ।
বঙ্কুই বা কে আর তার বাটী-ই বা কোথায়? কলকাতার অলিতে গলিতে বঙ্কু থাকে। তাদের পাড়ায় যে বঙ্কু ত্থাকে সে ত দিনের বেলায় পটলার দোকানে বসে থাকে আর রাতে দু-প্যাকেট দিশি খেয়ে পড়ে থাকে বিহারিবাবু-দের বারান্দায়, তার বাড়ি ই তো নেই। এক কাপ চা বানিয়ে টেলিভিসনে খবরের চ্যানেল ঘোরাতে থাকেন। নিজের মনে এক ইচ্ছা থাকলেও এই ধাধার বাধা অতিক্রম করা যে কঠিন তা বুঝতে পারছেন। তাই আশায় থাকেন যদি পুলিশ কর্তারাই উদ্ধার করে ফেলেন তো নিজেরও মান রক্ষা হয়। কিন্তু খবর বলতেও এক রাজনৈতিক দলের অন্য দলের প্রতি বিষদ্গার আর কয়েকটি দুর্ঘটনা ছাড়া আর রাজ্যের বিশেষ সংবাদ আর কিছুই পাওয়া গেল না।রাজনৈতিক খবরে বাংলাদেশে শহিদ মিনারে ভাষা দিবসের প্রস্তুতি।আনমনে চা খেতে খেতে ভাষা দিবস এর কথটা কয়েকবার কানে যেতেই অখিলবাবু লটারির টিকিট পাওয়ার মত লাফিয়ে উঠলেন।অন্তত একটা লাইনের মানে তিনি পেয়ে গেছেন।বাংলাদেশে আমার সোনার বাংলা গাওয়া হচ্ছে, রবিঠাকুরের এই গানটা তার খুবই প্রিয়।বন্দেমাতরম এর মধ্যে এই দেশাত্মবোধটা বেশি তের পান তিনি। একলা ঘরে উঠে পায়চারী করতে থাকেন তিনি।বঙ্কুবাটী তো বঙ্কিম বাবুর বাটী ও হতে পারে। মানে নৈহাটি!!!!!!!!!!!!!!!!
“বেদম” বলতে কি তাহলে? কলকাতা গাইড টা নিয়ে ঘাঁটতে থাকেন। যদি নৈহাটিতে বঙ্কিম বাবুর বাড়ি নিয়ে কিছু পাওয়া
যায়। কলকাতা গাইডে লোকাল ট্রেনের সময় সারণী খুলে বসে পড়েন।ভাবছেন, নৈহাটি টা ঘুরেই
আসবেন।ফেলুদাও তো ঘটনাস্থলে চলে যেতেন রহস্য উদ্ধারে। টাইম টেবিল টাতে চোখ বোলাতে
গিয়ে তার দমদম নৈহাটি লোকাল টা চোখে পড়ল। তাহলে “বেদম” কি দমদম? কিন্তু “বে” কেন?দমদমের উল্টো
কিছু আছে নাকি? কিচ্ছুক্ষণ ভাবার পর আর সব ট্রেন নির্ঘণ্ট ওলটপালট করে তিনি বেশ
আত্মতৃপ্ত হয়ে উদ্ধার করলেন যে সুখেন ডাউন দমদম নৈহাটি বলছে।যাক, দু লাইন সে পেয়ে
গেছে।শুরু টা মন্দ হল না, আর নিজের অপর বিশ্বাসটাও বেড়ে গেছে অনেকটা।
অনেক ভাবনা চিন্তা করেও
এর বেশি আর এগোতে পারছিলেন না।শেষমেশ ভাবলেন যে এতো নিজের মাথায় চাপ বাড়িয়ে লাভ
নেই। এর থেকে একটু বাইরের হাওয়া খেয়ে আসাই মঙ্গলের। ফেলুদা ও চারমিনার ঠোঁটে গুঁজে
হাওয়া খেতেন মগজ খোলার জন্য। নিজেকে ইতিমধ্যে এক বিশেষ শ্রেণীর মধ্যে ভাবতে শুরু
করেছেন অখিলবাবু।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি।
কিন্তু শীত তার আগেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদায় নিয়েছে।সারাদিন একটা ভ্যাপসা গরমের
পর সন্ধের দিকে তবু ফুরফুরে হাওয়া দেয়। রাস্তায় বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই চলে
এসেছেন, নিজেও বুঝতে পারেন নি।এরমধ্যে ঝমঝমিয়ে ভুতুড়ে বৃষ্টি নামল। না বেরিয়েছেন
ছাতা নিয়ে, যে এই অসময়ের বৃষ্টি থেকে বাঁচবেন। দৌড়ে সামনে অসীমবাবুর বাড়ির নিচের চাতালে দাঁড়ালেন। অসীমবাবু দেখতে পেয়ে
ডেকে নিলেন ভেতরে। এক বিদেশী কম্পিউটার সংস্থায় কাজ করে অসীমবাবু। বাড়ি ভর্তি
ইলেক্ট্রনিক গেজেট।বেশ আধুনিক এই ভদ্রলোক।অসীমবাবুর ছেলে বাবুল। টিভি তে গেম
খেলছে। আগে নাম শুনলেও, প্লে-ষ্টেশন বস্তুটার দেখা এই পেলেন অখিলবাবু,বেশ
আকর্ষণীয়।
কিভাবে বাবুলের নড়াচড়া টিভির পর্দার সাথে মিলেমিশে যাচ্ছে!রিমোট টিপে গুলি আর বোমার আক্রমণে এগিয়ে যাচ্ছে বাবুল, এটা নাকি ' কর্তব্য এর ডাক '। কিন্তু এই রিমোট কন্ট্রোল ব্যাপারটা অখিলবাবুর কাছে পুরো ধাঁদার জালটা খুলে দিল। বোতাম টিপে কোনো স্বয়ংক্রিয় বোমাকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে কেউ, আর তাতে বহু লোকের জীবননাশ। এতো এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার।একটা ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণ হলে প্রানহানির সংখ্যা গোনাও আয়ত্তে থাকবে না, একি মারাত্মক সত্যির মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন তিনি।নির্দিষ্ট কোন ট্রেনে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটাও বের করা যায়নি। শরদবেলা ফেব্রুয়ারি তে কি করে আসবে?
বাড়ি ফিরে ফ্লাক্সে চা ভরে ক্রমাগত পায়চারি করতে লাগলেন আর বারবার পড়তে লাগলেন ছড়াটাকে। ঘুঘুর বাসাই বা কি? ঘুঘু বলতে একটা পাখির চেহারা মনে আসে আর প্রচলিত বাংলার প্রবচন। "ঘুঘুর বাসা ধানের আড়ত"- ধান তো চাল ও হতে পারে? নিজের মনেই নিজেকে ধুর বোকা বলে উঠলেন তিনি।আরও কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর বাকি লাইন গুলোর মানেও তিনি মোটামুটি বের করে ফেললেন।সব অর্থই যে প্রতীকী হবে তা তো নয়।কিন্তু 'শরদবেলা' এখনো অস্পষ্ট। যাই হোক, যতটুকু হয়েছে তাই নিয়েই কাল যাবেন গনিবাবুর কাছে।
অনেক রাত করে ঘুমনোর পর সকালে উঠতেও খানিকটা দেরী হয়ে গেল।ঘরের কিছু কাজ শেষ করে যখন গনিবাবুর কাছে পৌঁছালেন তখন দুপুর হয়ে গেছে। রীতিমতো ঘামে ভেজা শার্টে অখিলবাবুকে দেখে গনিবাবূ চাঁদ পাওয়ার মতো উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়লেন।
-"আরে অখিলবাবু -আসুন আসুন।এই মাথায় রোদ নিয়ে না এসে, আমাকে তলব করলেই পারতেন?আমিই চলে যেতাম আপনার বাড়ি"- গনিবাবু অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অখিলবাবুর মুখে আচমকাই হাঁসি খেলে যায়ঃ "মাথার ওপর রোদ কখন ওঠে গণীবাবু? দুপুর বারোটা?"- এ ধরণের প্রশ্নে অবাক হয়ে যান গনিবাবু। কিছু সংকেত পেলেন কি আখিলবাবু?গনিবাবুর চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে।
-"বলতে পারেন এ যাত্রায় আপনি আর আপনার শহর হয়তো বেঁচে গেল"।
-"মানে?" গনিবাবু এখনও চিন্তিত। কি অর্থ ঐ লাইনগুলোর ?আখিলবাবু পকেট থেকে চিরকুটটা হাতে নিয়ে বলা শুরু করলেন-
"বেদম শব্দটাকে দমদম বলতে পারেন আর বঙ্কুবাটী মানে নৈহাটী। 'বে' শব্দটা বোধহয় ডাউন দমদম নৈহাটী লোকাল বোঝাতে ব্যাবহার হয়েছে।যে ঘটনাটা ঘটতে চলেছে তা ভাষা দিবস অর্থাৎ ২১ শে ফ্রেবুয়ারি র দিন। শরে রোদ কে যদি শরদ ভাবি তাহলে স্থান কাল এই ধাধাটার পরিষ্কার হয়ে যায়। বেলা বারটায় চাল যেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, মানে নৈহাটী লোকালের ভেন্দর কামরায়। রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম যদি ঠিক সময়মত টিপতে পারো তো বাঁকা চাঁদ মানে শতাধিক লোকের চন্দ্রবিন্দু প্রাপ্তি অবশ্যম্ভাবী।"
গনি বাবু হা করে রীতিমতো গিলতে থাকেন।
-আপনি ক ধরনের ছোলা চেনেন?
-গনি বাবু এ সময় এরকম ঠাট্টার জন্য তৈরি ছিলেন না।মনে মনে বিরক্তই হলেন মনে হয়।
-ছোলা তো কাবুলিছোলাও হয়।তাহলে খুঁজে দেখুন কোনো কাবুলিওয়ালা পান কিনা। তাকে ধরতে পারলেই আপনি 'মস্ত বাবু'।
আশা করি আপনার পুরো ধাধার উত্তর পেয়ে গেছেন।এবার এই শহর কে বাঁচানোর দায়িত্ব আপনার - অখিলবাবু যেন এক গুরুদায়িত্ব সম্পন্ন করলেন।
আর শেষ চমচমের মানে?- গনিবাবুর বিস্ময় জিজ্ঞাসা।
অখিলবাবু হাঁসতে হাঁসতে বলেন- যদি ধরতে পারেন জামাই আদর কিভাবে করবেন তা আপনার মর্জি।
-আমার তো ফাটছিল রীতিমতো তার আগেই তো আপনি ফাটিয়ে দিলেন মশাই।
অখিলবাবু এই দুই 'ফাটা'র দুই মানে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।এতো সমচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ হয়ে গেল!!!
বাড়ি ফিরে ফ্লাক্সে চা ভরে ক্রমাগত পায়চারি করতে লাগলেন আর বারবার পড়তে লাগলেন ছড়াটাকে। ঘুঘুর বাসাই বা কি? ঘুঘু বলতে একটা পাখির চেহারা মনে আসে আর প্রচলিত বাংলার প্রবচন। "ঘুঘুর বাসা ধানের আড়ত"- ধান তো চাল ও হতে পারে? নিজের মনেই নিজেকে ধুর বোকা বলে উঠলেন তিনি।আরও কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর বাকি লাইন গুলোর মানেও তিনি মোটামুটি বের করে ফেললেন।সব অর্থই যে প্রতীকী হবে তা তো নয়।কিন্তু 'শরদবেলা' এখনো অস্পষ্ট। যাই হোক, যতটুকু হয়েছে তাই নিয়েই কাল যাবেন গনিবাবুর কাছে।
অনেক রাত করে ঘুমনোর পর সকালে উঠতেও খানিকটা দেরী হয়ে গেল।ঘরের কিছু কাজ শেষ করে যখন গনিবাবুর কাছে পৌঁছালেন তখন দুপুর হয়ে গেছে। রীতিমতো ঘামে ভেজা শার্টে অখিলবাবুকে দেখে গনিবাবূ চাঁদ পাওয়ার মতো উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়লেন।
-"আরে অখিলবাবু -আসুন আসুন।এই মাথায় রোদ নিয়ে না এসে, আমাকে তলব করলেই পারতেন?আমিই চলে যেতাম আপনার বাড়ি"- গনিবাবু অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অখিলবাবুর মুখে আচমকাই হাঁসি খেলে যায়ঃ "মাথার ওপর রোদ কখন ওঠে গণীবাবু? দুপুর বারোটা?"- এ ধরণের প্রশ্নে অবাক হয়ে যান গনিবাবু। কিছু সংকেত পেলেন কি আখিলবাবু?গনিবাবুর চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে।
-"বলতে পারেন এ যাত্রায় আপনি আর আপনার শহর হয়তো বেঁচে গেল"।
-"মানে?" গনিবাবু এখনও চিন্তিত। কি অর্থ ঐ লাইনগুলোর ?আখিলবাবু পকেট থেকে চিরকুটটা হাতে নিয়ে বলা শুরু করলেন-
"বেদম শব্দটাকে দমদম বলতে পারেন আর বঙ্কুবাটী মানে নৈহাটী। 'বে' শব্দটা বোধহয় ডাউন দমদম নৈহাটী লোকাল বোঝাতে ব্যাবহার হয়েছে।যে ঘটনাটা ঘটতে চলেছে তা ভাষা দিবস অর্থাৎ ২১ শে ফ্রেবুয়ারি র দিন। শরে রোদ কে যদি শরদ ভাবি তাহলে স্থান কাল এই ধাধাটার পরিষ্কার হয়ে যায়। বেলা বারটায় চাল যেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, মানে নৈহাটী লোকালের ভেন্দর কামরায়। রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম যদি ঠিক সময়মত টিপতে পারো তো বাঁকা চাঁদ মানে শতাধিক লোকের চন্দ্রবিন্দু প্রাপ্তি অবশ্যম্ভাবী।"
গনি বাবু হা করে রীতিমতো গিলতে থাকেন।
-আপনি ক ধরনের ছোলা চেনেন?
-গনি বাবু এ সময় এরকম ঠাট্টার জন্য তৈরি ছিলেন না।মনে মনে বিরক্তই হলেন মনে হয়।
-ছোলা তো কাবুলিছোলাও হয়।তাহলে খুঁজে দেখুন কোনো কাবুলিওয়ালা পান কিনা। তাকে ধরতে পারলেই আপনি 'মস্ত বাবু'।
আশা করি আপনার পুরো ধাধার উত্তর পেয়ে গেছেন।এবার এই শহর কে বাঁচানোর দায়িত্ব আপনার - অখিলবাবু যেন এক গুরুদায়িত্ব সম্পন্ন করলেন।
আর শেষ চমচমের মানে?- গনিবাবুর বিস্ময় জিজ্ঞাসা।
অখিলবাবু হাঁসতে হাঁসতে বলেন- যদি ধরতে পারেন জামাই আদর কিভাবে করবেন তা আপনার মর্জি।
-আমার তো ফাটছিল রীতিমতো তার আগেই তো আপনি ফাটিয়ে দিলেন মশাই।
অখিলবাবু এই দুই 'ফাটা'র দুই মানে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।এতো সমচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ হয়ে গেল!!!
Story composed by +Rajib Chowdhury for Kolom story contest.
Jhaalmuri
Spread Creativity. Spread Happiness.