Monday, April 27, 2015

প্রকৃতি মন

পয়লা বৈশাখের দিন শ্রীর ঘুম ভেঙ্গে যায় একটু তাড়াতাড়ি । বাংলা নববর্ষের এই দিন এখন সবার কাছে ছুটির দিন। তাই মাছ,পাঁঠার মাংস,দই,মিষ্টি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যেয় ভিজে চুপ্পুস হয়ে ফিরেছে। কাল সারারাত ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডব চলেছে। চৈত্র সেলের শেষদিনের বাজার মাটি হয়ে গেল একেবারে। হঠাৎ মনে পড়ল শ্রীর , ‘আরে, কাল যে অত ঝড় হল- আম পড়েনি তাতো নয়।’ সপ্তাহ খানেক আগের কাল বৈশাখীতেও ওরা পাড়ার কয়েকজন মেয়ে মিলে হইহই করে আম কুড়িয়েছিল। যদিও জয় ছিলনা তখন বাড়িতে। কাল ঝড়ের সময় ছটফট করেছে একটু বেরনোর জন্য,পারেনি। ‘যাহ্, দেরি হয়ে গেল, পাশের বাড়ির স্নিগ্ধারা সব কুড়িয়ে ফেলল নাতো’। 

এলাকাবাসীর কাছে পাড়ার  একমাত্র আমগাছটার কদর অনেক বেশি। শহরতলীর আর পাঁচটা জনপদের মত এখানেও বাড়ন্ত শহরের ছোঁয়ায় গাছপালার সংখ্যা ক্রমশ কমছে।তাই এই আমগাছ ও তার সাথে কয়েকটি কদম ও কৃষ্ণ চূড়া একটু প্রকৃতির পরশ দিয়ে যায় পাড়ার পরিবেশে। পাখিও আসে কতরকমের , নাম না জানা,আর তাদের কীর্তি কলাপ দেখে কত সময় কেটেছে শ্রীর জানালার ধারে বসে।গরমের নির্জন দুপুর হোক বা বর্ষার ভিজে বিকেল কিম্বা শীতের কুয়াশা মাখা সকাল, সব সময় কোন না কোন পাখি  আসতেই থাকে । ইদানীং ওর ছেলে  টোটো ভালবাসে পাখি দেখতে । ঘুম থেকে উঠেই চলে যায় ওই জানালার সামনে। হাতের ইশারায় ডাকে ‘মা, দেখ ওই মাছ রাঙ্গা পাখিটা আবার এসেছে’। অত দুরন্ত ছেলেও তখন শান্ত ,ধীর , ধৈর্যের সাথে দেখতে থাকে পাখিদের আসা যাওয়া ।এখন দুটো কাক বাসা বেঁধেছে ওই গাছে। ডিম  ফুটে বাচ্চাও হয়েছে বেশ কয়েকদিন হল। তাই ছাদে উঠলেই কাক পিতা মাতা যুগল ছোঁ মেরে যৌথ আক্রমণ করছে মাথায়। টোটোকে নড়ানোই যায় না ,খাওয়া ,খেলা বা গল্প করা সব  এখন ওই জানালার ধারে।শ্রীর ভাল লাগে টোটোর এই আচরণ ।নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায় ।গরমের ছুটিতে  দাদু-ঠাম্মার কাছে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হত নিয়ম করে । সারা সকাল চলত হুটোপুটি। গ্রামের ছেলেমেয়েদের সাথে  গাছে ওঠা ,ছাগলছানা ধরা,পুকুরে লম্ফ ঝম্প ,ধান খেতে দৌড়নো । এখনকার প্রজন্ম কোথায় পায় এই স্বাধীনতা ,উচ্ছলতার স্বাদ। 

ভাবনার স্রোতে ভাসতে ভাসতেই জানালাগুলো খুলতে শুরু করল সে। শোবার ঘরে আমগাছের দিকের জানাল খুলেই ধাক্কাটা খেল সে। অন্য দিনের মত সবুজের আস্তরন চোখের সামনেতো নেই। কেন? …অবাক হয় সে। ‘জয়,জয়,’ চেঁচিয়ে ওঠে শ্রী ,ধড়পড় করে উঠে পড়ে জয় সাথে টোটোও। এরপর চিৎকার করে ওঠে ,’মা মা... আমার গাছ কই্‌...আমার পাখি কই মা...। শ্রীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ...গলার কাছে একটা দলা বাঁধছে । কাল রাতের ঝড় ভেঙ্গে দিয়ে গেছে আমগাছের বড় বড় দুটো ডাল ।ভেঙ্গে গেছে টোটোর কাকেদের ছোট্ট সংসার ,সরে গেছে প্রকৃতিকে কাছ থেকে পাবার সুযোগটুকু ।নিচে পাড়ার অনেকে জড় হয়েছে।দুজনের বাইক রাখা ছিল গাছের তলায়,ডাল দুটো চাপা দিয়েছে সেগুলকে।জয় কথা বলছিল তাদের সাথে।শ্রীর মনে পড়ল রান্নাঘরে যেতে হবে এবার।  টোটোকে ভোলানোর মতো কিছু বলার খুঁজে পেলনা সে।বেচারা মুখ শুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খানিক পরে হঠাৎ  টোটো  ডাকল ‘মা’...হাতের ইশারায় কাছে যেতে বলল। এতক্ষণ জানালার পাশ থেকে নড়ে নি ও ।কান্না থেমে গেছে তার।কাছে যেতে দেখাল,... ‘আমার পাখি মরেনি মা ...পাখি আছে ...ওই দেখ খাবার খাচ্ছে’।বিস্মিত শ্রীর নজর গেল পাশের কৃষ্ণ চূড়া গাছের ডালে।কাক দম্পতির কড়া প্রহরায় ছোট্ট কাকটি নিশ্চিন্তে নতুন আশ্রয়ে বসে আছে। কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা স্বাগত জানাচ্ছে এই নতুন অতিথি দের । সেই রঙ ছুঁয়ে গেল জানালার এপারের মা-ছেলেকেও।

Story by Anindita Das 
From Jhaalmuri Boisakhi 2015







Jhaalmuri 


No comments:

Post a Comment

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...