Thursday, January 28, 2016

বিস্কুট

Story by +Anamitra Ray 

আম পাতা জোড়া জোড়া
মারব চাবুক ছুটবে ঘোড়া
ওরে বিবি সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া খেপেছে
বন্দুক ছুঁড়ে মেরেছে
অল রাইট ভেরি গুড
মেম খায় চা-বিস্কুট।

এ হল সেই আগডুম বাগডুম বয়েসের কথা। যারা ছোটো থেকে বড়ো হয়ে বুড়ো হল, যারা ছোটো থেকে বড়ো হচ্ছে বা যাদের এখনও বড়ো হওয়া শুরু হয়নি, তাদের সবার কথা। এই ধরনের ছড়া বা কবিতায় কোনোদিন কোনো লেখক বা লেখিকার নাম লেখা ছিল না। যেটা ছিল, তা হল, শেষ পঙক্তির ডান দিকে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে একটু ছোটো হরফে, ‘প্রচলিত’। তাই আমরা এটুকু জেনে বা শিখেই ক্ষান্ত হয়েছি যে মেম বিস্কুট দিয়ে চা খেয়েছিলেন। আর আমার মতো বিস্কুট-প্রেমীরা আর একটু যোগ করে নিয়েছি নিজে নিজেই—‘বিস্কুট ছাড়া চা খেতে নেই। খাওয়া যায় না। পানসে লাগে।‘

বিস্কুট হল এক অনন্ত মহাকাব্য। এ মহাকাব্যের অনেক অধ্যায়। প্রত্যেক অধ্যায়ের পরতে পরতে রহস্য, রোমাঞ্চ। যাঁরা উচ্চারণ নিয়ে লড়াই করেন, তাঁরা ইংরেজি অভিধান খুলে বোঝানোর চেষ্টা করবেন ‘বিস্কুট’ নয়, ‘বিস্কিট’। কিন্তু, বিস্কুট আমার ভোরের স্বপ্নে, আর বিস্কিট বারান্দা পেরিয়ে রান্নাঘরের তাকের কোনায়।

থিন না মেরি? থিনও, মেরিও। বড়োরা বলবে, মেরি নয়, মারি। শিশুমন বলবে, আমার মেরিই ভালো।

একটা থিন বিস্কুট মানে অনেকটা মনঃসংযোগ। কারণ সুদর্শন চক্রের মতো ‘কিরি কিরি’ ধারওলা একটা থিন বিস্কুটের ধার বরাবর ক্লক ওয়াইজ বা অ্যান্টি ক্লক ওয়াইজ একটু একটু করে কামড়ে কামড়ে একটা নিটোল গোল রূপ দেওয়ার অক্লান্ত চেষ্টা। কখনো সাফল্য, কখনো ব্যর্থতা। তাই থিন বিস্কুটের মোহ জীবন ছাড়ে না।

খুব ছোটোবেলায় মেজোমামু বলেছিল, থিন বিস্কুট খেয়েই জল খাবি না। অম্বল হবে। এই বিশেষ তথ্যটা কোন বইয়ের পরিশিষ্টে লেখা ছিল জানি না, আজ তাই একটা বিস্কুট খেয়ে অনেকটা জল খাই।

পেটুকরাম একের পর এক উলটোপালটা খাবার খেয়ে যেদিন শয্যাশায়ী হল, দুপুরে ভাতের পাতে তার জন্য বরাদ্দ হল আলু, পেঁপে আর কাঁচকলা দিয়ে শ্যামবর্ণ ঝোল সেই প্রবল দুঃখের দিনে পেটুকরামের পাশে যে বন্ধুটি ছিল সে আর কেউ নয়, তার সাধের থিন বিস্কুট। এক বাটি শুকনো মুড়ির ভেতর থেকে লাইটহাউসের মতো মাথা তুলেছিল বিস্কুটের ছোট্ট ছোট্ট টুকরো আর মুড়ির সঙ্গে অদৃশ্য হয়ে মিশে ছিল বিস্কুটের গুঁড়ো। সেই দুঃখের দিনে তাকেই পেটুকরামের মনে হয়েছিল যেন সাক্ষাৎ ‘দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এর কাঁচের তাকে থরে থরে সাজানো কমলা অমৃতি।

থিন বিস্কুটের পর ক্রিম বিস্কুট। টিফিনে দু-পিস স্যান্ডউইচের পাশের ছোট্ট খোপটায়  দু-জোড়া অরেঞ্জ ক্রিম বিস্কুট উঁকি দিলে মনে আনন্দের ঝড় বয়ে যায়। আর কোনোরকমে স্যান্ডউইচ গলাধঃকরণ করেই ক্রিম বিস্কুটের জোড় খুলে নিয়ে জিভ দিয়ে চেটে আগে ক্রিমের স্বাদগ্রহণ, তারপর শুকনো বিস্কুট চিবিয়েই এক ঢোঁক জল।

আর সেই প্রথম দুধের গেলাসে চায়ের লিকার মিশিয়ে খাওয়ার দিন? উত্তেজনায় হাত ফসকে বিস্কুট ডুবে যায় দুধসাগরে আর তৎক্ষণাৎ ফুলে, ফেঁপে একশা। সে আর এক উত্তেজনা।
বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা-জীবনের সঙ্গে বিস্কুট-জীবনও অন্তরঙ্গভাবে জড়িয়ে গেছে। তাই বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই শুধু নয়, কাজে বেরিয়ে রাস্তায় যখন চা-তেষ্টায় প্রাণ ছটফট, তখন পথের ধারে চা-গাড়ির সামনের বেঞ্চে বসেই বিস্কুটের সারি সারি বয়ামের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাওয়া, ‘কোনটা? ওই লম্বা, চৌকোটা, গোল বাদাম দেওয়াটা, নাকি, ওই একটা এবড়োখেবড়ো বিস্কুট সব চা-দোকানেই থাকে, সেইটা?’ মূল কথাটা হল, এক কাপ কেন, আণুবীক্ষণিক এক ভাঁড় চা খেলেও সঙ্গে চা-দোকানের একটা বিস্কুট খেতেই হবে। যারা প্রকৃত বিস্কুটপ্রেমী, তারা ডগ-বিস্কুটও সমান আনন্দে, সমান উত্তেজনায় খেয়ে থাকে। এ প্রমাণ আমার কাছে আছে।

মহাকাব্যের আর এক অধ্যায় জুড়ে আছে সেই গোল, গোল নারকোল বিস্কুট, যার ঠিক মাঝখানে খোদাই করে লেখা, ‘BILL’। সেই ‘বিল’ বিস্কুটের চিরন্তন স্বাদ আর কারো বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে মিষ্টির প্লেটের পাশে একটা কি দুটো ‘বিল’ বিস্কুট হঠাৎ আবিষ্কারের আনন্দ (যাকে ‘পুলক’ বললে ঠিক ঠিক বলা হয়) অন্য কোনো দামি, কম দামি, সাধারণ বা তুচ্ছ বিস্কুটও আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি। এই নারকোল বিস্কুট আবার ছোট্ট ছোট্ট আট আনা কয়েনের আকারেও পাওয়া যেত। তবে তা কিন্তু একটা কি দুটো গুনে খাওয়ার নয়। তার মাপ হল ‘মুঠো’। অর্থাৎ, এক মুঠো, দু-মুঠো বিস্কুট।

মহাকাব্যের আর এক অধ্যায়ে আছে ‘নোনতা’ বিস্কুট। সেই মাঝারি আকারের গোল বিস্কুটের গায়ে চারটে ফুটো। নোনতা বিস্কুটের অস্তিত্বের সঙ্গেও নম্বরের যোগ ততটা নেই। কারণ, একটা খাওয়ার পরেই মন বলে ওঠে, আর একটা। তার পর, আর একটা. . .এভাবেই একসময় ‘এক’ হয়ে যায় বহু।

বিস্কুট যখন মহাকাব্য, তখন ব্যাপারটা মোটেও হেলাফেলার নয়। তার একটা মর্যাদা আছে, একটা সম্মান আছে। তাই, একজন প্রকৃত বিস্কুটপ্রেমীকে চিহ্নিত করতে হলে জানতে হবে, তাঁর শৈশবে, কোনো এক শুনশান দুপুরে বাড়ির সবাই যখন ঘুমিয়ে, তিনি কি চুপি চুপি ফ্রিজ খুলে মাখন আর জ্যামের শিশি বের করে দুটি ‘একক’ বিস্কুটের গায়ে পুরু করে মাখিয়ে, তাদের চেপে ধরে, গা দিয়ে উপচে বেরোনো মাখন বা জ্যাম দু-চোখ বুজে জিভ দিয়ে চেটে খেয়ে দেখেছেন? 



Jhaalmuri Winter Special 2016


Download the full magazine from the website: 



Wednesday, January 27, 2016

আমার মত


কিছু কিছু  মানুষ থাকেন যাদের সান্নিধ্যে  এলে মন আপনা থেকেই ভালো হয়ে যায়। যারা শত রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ, কষ্ট বুকে চেপে রেখে অনাবিল আনন্দে গা ভাসিয়ে দিতে পারেন। পরের দিনটা বাঁচবে্ন কি না তার নিশ্চয়তা নেই জানা সত্ত্বেও তাঁরা আজকের দিনটিকে প্রাণভরে উপভোগ করেন। এমনই একজন মানুষ ছিলেন আমার কাকা, আমার মত।

এই ‘মত’ নামের পেছনে একটা ইতিহাস আছে। আমার জন্মের পরে আমাকে তখনো আমাকে মায়ের কাছে এনে দেওয়া হয়নি। কাকা আমাকে দেখে এসে মাকে বললেন, “বউদি, তোমার মেয়ে দেখতে একেবারে আমার মত হয়েছে”। শুনে মায়ের কি চিন্তা। কারণ কাকার গায়ের রঙ মিশ্‌ কালো। আর ভারতবর্ষে মেয়েদের গায়ের রঙ কালো হওয়া মানে তো ঘোর সর্বনাশ। তাই আমার ভারতীয় মা চিন্তান্বিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে কাকা সকল সময় আমাকে বলতেন, “তুই বড় হয়ে আমার মত হবি”। শুনতে শুনতে আমি কাকাকে মত বলে ডাকতে শুরু করি। উল্টে কাকাও আমাকে মত বলে ডাকতে শুরু করেন এবং আমরা একে অপরের ‘মত’ হয়ে উঠি।
মত ছিল অসম্ভব প্রাণবন্ত একটা মানুষ। তার মাথায় সবসময় বিচিত্র সব বুদ্ধির আনাগোনা হত। আশেপাশের গোমড়ামুখো মানুষগুলোকে নির্মল আনন্দে ভাসিয়ে দিতে মত সদা তৎপর থাকতো। আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেকের সাথেই একই ভাবে মিশত মত। কর্মক্ষেত্রেও একই ভাবে জনপ্রিয় ছিল মত। আমরা থাকতাম একটা ছোট পাহাড়ি শহরে। সেখানের বাঙালি সমাজে রসিক মানুষ হিসেবে সবাই মতকে একডাকে চিনত। প্রচুর বন্ধু বান্ধব ছিল মতর। 

মতর চোখের মণি ছিলাম আমি। আমার পুরো ছোটবেলাটাই মতর সংস্পর্শে কেটেছে। অনেক কিছুই আমার মতর কাছে শেখা। মত ছিল আমার ছেলেবেলার বন্ধু, আমার খেলার সাথী, আমার দুষ্টুমির সাগরেদ, আমার আব্দারের জায়গা। আমার বাবারা ছিলেন দশজন ভাইবোন। তাই যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে বাড়িতে প্রচুর লোক জমা হত। আমরা সব খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো, পিসতুতো ভাই বোনেরা মিলে সে কি হুল্লোড় করতাম। আর আমাদের দলপতি হত এক এবং অদ্বিতীয় মত।

আমার বাবার একটাই বিলাসিতা ছিল জীবনে। সেটা হল ছুটির দিনের ঘুম। এক রবিবারে বেলা দশটা পর্যন্ত বাবা ঘুমোচ্ছেন আর তাঁর নাক ডাকছে। মত সেই নাসিকা গর্জন একখানা টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে রেখেছিল। পরে সেটা শুনে সবার কি হাসি। আর একবার আমার জ্যাঠতুতো দিদি মুক্তার শাশুড়ি মৃত্যুশয্যায়।  সবাই বিমর্ষ। মত ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত ছিল। হঠাৎ বলে উঠল, “আমার এখুনি একটা চিঠি লিখতে হবে”। শুনে সবাই বলে উঠল, “কাকে চিঠি লিখবে?” মত বল্‌ল, “মুক্তার শাশুড়ির হাতে মা বাবার (অর্থাৎ আমার স্বর্গতঃ দাদু ঠাকুমার) জন্যে একটা হাত চিঠি পাঠিয়ে দেব”। শুনে সবাই একচোট হাসল। এই ছিল মত। তাঁর আশে পাশে লোক চুপ করে দুঃখ পেয়ে বসে থাকবে, সেটি হবার নয়। 

যেদিন আমি প্রথম স্কুলে ভর্তি হই, সেদিন মায়ের সাথে মতও গিয়েছিল আমাকে নিয়ে। ফেরার পথে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে মত বাসে চেপে অফিসে চলে গিয়েছিল। সেদিন বাসে মতর পকেটমার হয়ে সাতশো টাকা খোয়া গিয়েছিল। সেই থেকে মত ঠাট্টা করে বলতো, “তোর কাছে আমার সাতশো টাকা পাওনা আছে”। আমার বিয়ের দিন আমার বরকেও মত সেই সাতশো টাকার দুঃখ শুনিয়েছিল।
তখন আমার বয়েস বোধহয় সাত বছর। এক রবিবারে মতর শখ হল আমার চুল কেটে দেবে। সেই চুল কাটার পর্ব চলল ঘণ্টাখানেক ধরে। চুল কাটা শেষ হবার পর মত বললো, “বাঃ, ফাইন হয়েছে”। তারপর কোন এক অজ্ঞাত কারণে ব্যস্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল। এদিকে আয়না দেখে আমার তো চক্ষুস্থির  । এমন ভাবে চুল কাটা হয়েছে যে, যেই দেখছে মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে। চুল কোথাও লম্বা, কোথাও ছোট, কোথাও বা স্রেফ খালি। রাগে আগুন হয়ে আমি কাঁচি হাতে মতর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সেদিন যখন মত ফিরেছিল, তখন আমি মতর মাথায় এলোপাথাড়ি কাঁচি চালিয়ে গোছা গোছা চুল কেটে ফেলেছিলাম। পর দিন মতর অফিস আর আমার স্কুল। দুজনেই টুপি পরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম।

আমার বই পড়ার অভ্যেসটাও মতর জন্যেই তৈরি হয়েছিল। মত রোজ শোবার আগে আমাকে বই থেকে গল্প পড়ে শোনাত। আর রোজই গল্পের মাঝপথে এসে থেমে বলতো, “আজ আর নয়, আমার ঘুম পেয়েছে”। বাধ্য হয়ে বাকি গল্পটা আমার নিজেই পড়ে নিতে হত।

মত অনেক কঠিন বিষয়কে সহজ করে বোঝাতে পারত। একটা সামান্য উদাহরণ দিচ্ছি। তখন আমি অনেক নিচু ক্লাসে পড়ি। পরীক্ষার আগের দিন lieutenant বানানটা কিছুতেই শিখতে পারছিনা। মত এসে বললো, “ শোন, এভাবে মনে রাখবি, মিথ্যা তুমি দশটা পিঁপড়া, এই কথাটা ইংরাজিতে অনুবাদ করলেই হয়ে যাবে”। আজও lieutenant বানানটা আমার এভাবেই মনে রয়েছে। মত একবার আমায় বলেছিল, “জানিস, মাত্র ৫০ নম্বরের জন্যে ম্যাট্রিকে আমি অংকে লেটার পাই নি।“ এই রকম ছোট ছোট অসংখ্য ঘটনা আমার স্মৃতিতে ভিড় করে আছে।

আমার এই প্রাণবন্ত, হাস্যরসপ্রিয় মতর শরীরে কঠিন রোগ বাসা বেঁধেছিল। যৌবনে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানের ফলে মতর ফুসফুস দিন দিন জীর্ণ হয়ে পড়ছিল। খুব কষ্ট পেত মত। শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকত। কিন্তু এত অসুস্থতার মধ্যেও একটি দিনের জন্যেও মতর মুখের হাসি মিলিয়ে যায়নি। যখনই প্রশ্ন করতাম, “কেমন আছ?”, মত হাসিমুখে বলতো, “ ফাইন, ফাইন”। 

আজ মত নেই। শেষবার যখন শরীর বেশী খারাপ হল, তখন হাসপাতালে যাবার সময় অ্যাম্বুলেন্সে আমার কাঁধে মাথা রেখে মত একটু বাতাস পাবার জন্যে কি আকুলি বিকুলি করছিল। আকারে ইঙ্গিতে আমাকে বলছিল, “এবার আর ফিরে আসবো না”। সেবার এত কষ্টের মধ্যেও হাসপাতালে থাকাকালীন মত আমার জন্মদিন মনে রেখেছিল। এই পৃথিবীতে মতর মত মানুষ খুব কম জন্মায়। তারা শুধু অপরকে আনন্দ দিয়েই যায়। নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে না দিয়ে সবাইকে হাসি গল্পে ভুলিয়ে রাখে। বিনিময়ে কতটা ভালবাসা পেল, তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা থাকেনা। মতর কাছে শেখা জীবনের এই শিক্ষা আমাকে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করেছে। 


Jhaalmuri Winter Special 2016


Tuesday, January 26, 2016

স্বপ্ন

Story by Anindita Das


চিলাপাতা জঙ্গলের মেন্দাবারি ক্যাম্পের বুকিংটা যে পেয়ে যাবো, আশা করিনি।এর আগেও চেষ্টা করে পাইনি বহুবার। শীতের ছুটিতে উত্তরবঙ্গের কোথাও একটা বেড়াতে যাবো ঠিক করেছিলাম। বক্সা-জয়ন্তির সাথে চিলাপাতার জঙ্গলটাও উপভোগ করবো ভাবলাম।সেই রামগুয়া গাছ,যার গা থেকে রক্তের মত লাল রস বের হয়।আর আছে হাতি-বাইসন। এদের জন্যইতো চিলাপাতা এত শিহরণময়।জঙ্গল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যদিও নতুন নয় তাও জঙ্গলে রাত্রিযাপন,এর আগে বহুবার বিফল হয়েছে।গভীর জঙ্গলের ফরেস্ট বাংলোর বুকিং পাওয়া আর শেষ পর্যন্ত সেখানে গিয়ে থাকতে পারার সৌভাগ্য আজ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।অনেক আশা নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ট্রেনে চেপে বসলাম, সঙ্গে ট্যুর প্ল্যানার আমার স্ত্রী শ্রীলেখা।
নিউ আলিপুরদুয়ার ষ্টেশনে নেমে আগে থেকে বুক করে রাখা গাড়ির ড্রাইভার রতনজী একটা খারাপ খবর শোনালো। ‘ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অফিসারেরা হঠাৎ করে এসে পড়েছেন তাই এই অঞ্চলের বেশীরভাগ বনবাংলোর বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে,টুরিস্টদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা’। শুনেই টেনশন গেল বেড়ে। মালপত্র গাড়িতে তুলে জঙ্গল ভ্রমণের পারমিটের ব্যাপারে কথাবার্তা বলে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট হল। একটু পরেই জঙ্গলের রাস্তায় পড়লাম। নীরব,নিশ্চুপ,শীতের ধূসরতা মেশানো গাছের সারির মাঝ দিয়ে রাস্তাটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে,কালো ফিতের মতো। রতনজী বললেন-‘কাল এই রাস্তায় হাতির পাল বেরিয়েছিল,কয়েকটা টুরিস্টদের গাড়ি তাদের সামনে পড়েছে’। এইখানে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেল,যারা জঙ্গলে বেশ কয়েকবার গেছেন তারা খেয়াল করে দেখবেন এখান কার গাইড বা ড্রাইভারদের কথা শুনে মনে হয়,জন্তু-জানয়ারগুলো যেন ঘরের মুরগি-ছাগলের মতো আজ এখানে কাল ওখানে চরে বেড়ায়।অথচ আমরা যারা টুরিস্ট  তারা গেলেই আর কিছুই দেখতে পাইনা। একবার গরুমারা ফরেস্টের মেদলা ওয়াচ-টাওয়ারের কাছে গিয়ে শুনলাম দুটো গণ্ডার নাকি জঙ্গলের পাশের গ্রামের কাছে এসে সাতদিন ধরে লড়াই করেছিলো।যদিও আমরা গিয়ে ওয়াচ-টাওয়ার থেকে অনেক কষ্টে গণ্ডারের একটা লেজ ছাড়া কিছু দেখতে পাইনি।তবে এবারের বেড়ানো কোনও জন্তু দেখার তাড়নায় নয়। রাতের জঙ্গলকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করার ইচ্ছায়।তা সেটাও প্রায় ভণ্ডুল হওয়ার যোগাড়।                                                        

একটা কাঠের ব্রিজ পেরিয়ে ক্যাম্পের সামনের গাড়ি দাঁড়ালো, সঙ্গে সঙ্গেই খবর এল বুকিং বাতিল ফরেস্ট অফিসারদের সৌজন্যে।শ্রীলেখা আর আবেগ ধরে রাখতে না পেরে হাতের ব্যাগটা মাটিতে ধপ করে ফেলে,তার ওপর বসে ভ্যা করে কেঁদে ফেলল। ওর এই কাণ্ড দেখে বাকিদের সাথে আমিও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে  গেলাম। সবাইকে অপ্রস্তুত করে দাবি করে বসল কোনও হোটেলে ও থাকবেনা,থাকতে হলে জঙ্গলের ভেতরেই কোথাও ব্যবস্থা করে দিতে হবে।ওর এই কান্না আর বায়না নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত,আমি সেই সুযোগে ঘুরেঘুরে চত্বরটা দেখছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল ক্যাম্পের একদম শেষ প্রান্তে একটা কাঠের কটেজ একটু আলাদা সবার থেকে,তালা বন্ধ ও একটু পরিচর্যার অভাব রয়েছে। একজন ক্যাম্পের কর্মীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম এই ঘরটা সম্বন্ধে। লোকটি জানালেন ঘরটা কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত,কাউকে দেওয়া হয়না,কারণটা ম্যানেজারবাবু বলতে পারবেন। আমি গিয়ে ম্যানেজারকে ধরলাম,শ্রীলেখাও পাশে চলে এসেছে ততক্ষণে।দুজনে মিলে অনেক ঘ্যানঘ্যানানি,রাগারাগি, কথাবার্তার পর ম্যানেজারবাবু রাজি হলেন। খালি বললেন ‘আপনারা থাকবেন সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে,পুরনো ঘর,বুঝতেই পারছেন।তাছাড়া অফিসারদের চোখে পড়ে গেলে মুশকিল তাই ঘরের পিছনেরর দিকের বারান্দা সংলগ্ন দরজা ব্যবহার করবেন,কেউ যেন দেখতে না পায়’। আমি বললাম ‘নিশ্চিন্ত থাকুন একটা মাত্র রাতের জন্য থাকব,কাল সকালেই বক্সা চলে যাবো আমরা’।                    
                     
যা পাওয়া যায় তাই সই, বরং এটা আরও অ্যাডভেঞ্চারাস হবে-এই ভেবে ঘন ঘাস আর চোরকাঁটার সারি পেরিয়ে বাংলোর কর্মীর পিছুপিছু ঘরটার পিছন দিক দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। অনেক দিনের বন্ধ ঘরের গুমোট গন্ধ প্রথমেই নাকে এল।তাও মোটামুটি ব্যবহারযোগ্য করতে বলে আমরা  জঙ্গল দেখতে বেরিয়ে পড়লাম।রতনজী পারমিট বানিয়ে রেখেছিলেন।আমাদের ঘর পাওয়ার গল্প শুনে কেমন গম্ভীর হয়ে বললেন ‘না থাকলেই পারতেন ওসব পুরনো ঘরে,কোথায় কি পোকা কি সাপ থাকবে’। কথা বলতে বলতেই জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করে গেলাম।লাল মাটির এবড়ো খেবড়ো রাস্তার ঝাঁকুনি আর একটানা ঝিঁঝিঁর  শব্দের মধ্যে দিয়ে বিশাল বড়বড় গাছের ডালপালার  চাঁদোয়ার তলা দিয়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল।ঝরে পড়া শুকনো পাতা মাড়িয়ে যাওয়া চাকার অদ্ভুত মচমচ আওয়াজ, ময়ূরের ডাক সব মিলিয়ে গা ছমছম ভাব। প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা এই বুঝি কোন হাতি বা বাইসন বেরিয়ে এল।কিন্তু কোথায় কি? যথারীতি হতাশা। এইভাবেই এক সময় পৌঁছে গেলাম নল রাজার গড়। ধ্বংসস্তূপকে ছাপিয়ে,আগাছার স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে। সেভাবে কিছুই দেখার নেই তাই গাড়িতে উঠতে যাবো হঠাৎ পিছন থেকে জামার হাতায় টান পড়লো।দেখি একজন স্থানীয় বৃদ্ধ আদিবাসী হিসহিসে গলায় জিজ্ঞেস করল ‘রাজার গড়তো দেখল্যা,রাজার কথাটো শুনব্যা না বাবু’। গল্পের গন্ধে শ্রীলেখা থমকে গেল,-‘আচ্ছা এই খানেই তো রামগুয়া গাছ আছেনা?ঠিক কোথায় আছে?’ তাইত আমারও মনে পড়ে গেলো।বুড়ো মানুষটি চকচকে চোখে বলল ‘গাছ লয়গো মা, গাছ লয়, উরা পাহার‍্যাদার...’ এবার অবাক হওয়ার পালা  অভিশাপে নিবংশ হল রাজার বংশ;খালি রাজার বিশ্বস্ত পাহার‍্যাদার হয়ে গেল এমনে এক গাছ যার গা থ্যেকে রক্ত ঝরে’... ‘যতসব বাজে গল্প্‌’-বিড়বিড় করলাম আমি।লোকটা শুনতে পেয়ে বলল ‘নাগো বাবু,এই চিলাপাতা জঙ্গল রহস্যে ভর‍্যা গো,ইখানে আজও ইমন ঘটনা ঘটে যা তুরা শহুরে বাবুরা বিশ্বেস করবুনি...’ হঠাৎ রতনজী এসে পড়লেন ‘স্যর,জলদি আসুন,এখানে আর দাঁড়াবেন না।তোরশা নদীর ওপর সানসেট দেখবেন চলুন’। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে হাঁফ ছাড়লাম,লোকটা খুবই অস্বস্তিকর। তোরশার জলে রক্তাভ সূর্যের আলোর খেলা দেখে সন্ধ্যের মুখে ক্যাম্পে ফিরে এলাম। চিতা বাঘের সম্ভাব্য উপস্থিতির জন্য রাত্রি ৮টার পর ক্যাম্পের মাটিতে নামা বারণ। তাই তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে সবাই ঘরে ঢুকে যায়। মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচু কটেজগুলো অনেকটাই নিরাপদ এইদিক থেকে।আমাদের ঘরে রাতের খাবার দিতে আসা কর্মচারী বলরাম একটা হ্যাজাক ধরণের আলো ও দুটো মোমবাতি দিয়ে গেল।বারবার করে বলল কোনও অসুবিধা হলে মোবাইলে ফোন করতে এরপর আরও কিছু বলতে গিয়েও যেন চুপ করে চলে গেল। খাওয়া সেরে পিছনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে অরণ্য,রোমাঞ্চকর সেই অনুভূতি।রাতের জঙ্গলের অদ্ভুত কিছু শব্দ আর স্বপ্নালু জগত ঘিরে রইল আমাদের।মাঝেমাঝে পাশের কোদালবস্তি থেকে হিন্দি গানের আওয়াজ ভেসে আসছে।সভ্য জগতের ওইটুকুই ছোঁয়া রয়ে গেছে এই মুহূর্তে।

সারাদিনের ধকল আর পরের দিন সকালে ওঠার তাড়া থাকায় বেশীক্ষণ বাইরে থাকা গেল না,ঠাণ্ডা হাওয়ার প্রকোপ বাড়ছিল। ঘরে ঢুকেই একটা ধোঁয়া ধোঁয়া গন্ধ এলো,আশ্চর্য! এতক্ষণতো ছিলোনা গন্ধটা,হ্যাজাক থেকে আসছে কি?শ্রীলেখা আবার সব দরজা জানালা বন্ধ করতে শুরু করেছে  ঠাণ্ডার ভয়ে।ঘরের ছাদের কাছে একটা ঘুলঘুলি আছে সেটা খেয়াল করেনি বেচারি। আমিও কিছু বললাম না।দুটো করে কম্বল আপাদ-মস্তক মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।ঘটনাটা ঘটলো শেষ রাতে ঘুমের মধ্যেই।হঠাৎ যেন মনে হল নাক জ্বালা করছে,গলাটাও যেন বন্ধ হয়ে আসছে। তীব্র শ্বাসকষ্টে ছটফট করে উঠলাম।ঘেমে যাচ্ছে সারা শরীর,কিন্তু গায়ের কম্বল টা ফেলে দেওয়ার ক্ষমতাটুকুও যেন নেই। অনেক কষ্টে পাশ ফিরে শ্রীলেখাকে ডাকতে যাবো,হাতটা অনেক  উপরে উঠে ধপ করে পড়ে গেল।তাকিয়ে দেখি শ্রীলেখা বিছানায় ওপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে। ডাকার মতো গলায় জোর পাছছিনা,অথচ এখুনি উঠে বাইরে যাওয়া দরকার,ঘরটার মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসছে... একটু বাতাস...একটু খানি খোলা বাতাস...আআহ আআহ...শ্রী...শ্রী...খক খক করে কাশতে কাশতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। পর মুহূর্তেই চমকে উঠে দেখি,সকালের আলো কটেজের জানলার কাচ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে।শ্রীলেখা কে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে জঙ্গলের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে সে।কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই জড়িয়ে ধরল সে, ফুঁপিয়ে উঠে বলল ‘কাল রাতে একটা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছি আমি...মৃত্যুকে এতো তীব্র ভাবে উপলব্ধি হয়েছে আমার...’ শিউরে উঠলাম আমি,একি!এত আমারি স্বপ্ন...কিকরে সম্ভব!

ভোরের চিলাপাতা পাখিদের  কলতানে মুখর হয়ে উঠছে তখন দুজনের বিহ্বলতার মাঝে বলরাম যে কখন চায়ের ট্রে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। আমাদের স্বন্ত্রস্তভাব দেখে কিছু আন্দাজ করেই যেন থমকে গেছে সে। ‘আপনারাও বুঝি স্বপ্নটা দেখলেন’।হাতের ট্রে নামিয়ে বলে চলল সে ... ‘বছর দশেক আগের কথা ,অল্পবয়সী এক ভদ্রলোক স্ত্রী কে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন। এই কটেজটা তখন সদ্য বানানো হয়েছে,তবে electricity না থাকায় রাতে ঘরে ল্যাম্পের ব্যবস্থা থাকতো। ওরা এসেছিলেন গ্রীষ্মের শুরুতে,পোকামাকড়ের উপদ্রব তখন একটু বেশি থাকে ।ভদ্রমহিলার ছিল পোকার ভীতি,তাই রাতে সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। সারারাত ওই বন্ধ ঘরে, ল্যাম্পের আলোয় ...সকালে ক্যাম্পের লোক অনেক ডাকাডাকি করেও যখন সাড়া পায়না,দরজা ভাঙ্গা হয়।স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তখন মৃত। আমার নিজের চোখে দেখা স্যর...কি বীভৎস সেই দৃশ্য... দুজনের মুখ দিয়ে কালো রস ...।নাহ...পরে পুলিশের কাছে শুনেছি বিষাক্ত গ্যাসে সারা ঘর ভরে গিয়ে ঘুমের মধ্যেই মারা গেছিলেন উনারা।তারপর থেকেই এই ঘরে যারা রাত কাটায় একটা দুঃস্বপ্ন তাড়া  করে সারারাত ধরে। অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে এই ঘরের।ওপরে ঘুলঘুলি বানানো হয়েছে,জেনারেটরের সাহায্যে এক সময় আলোর ব্যবস্থাও করা হল।কিন্তু সেই স্বপ্নের বিভীষিকা দূর হলনা। বছরখানেক পর ওপরতলা থেকে আদেশ এল কটেজ বন্ধ করে দেওয়ার। এইজন্য ম্যানেজারবাবু আপনাদের প্রথমে এই ঘরটা দিতে চায়নি।আপনাদেরি মত ছটফটে চনমনে মানুষ দুটো এই চিলাপাতার জঙ্গলে চিরতরে হারিয়ে গেল।সন্ধ্যের পর এইদিকটায় কেউ আসতেও চায় না।আমি নিজে বেশ কয়েকবার রাতে ফাঁকা ঘরে হ্যাজাকের আলো জ্বলতে দেখেছি।এখনকার দিনে কেউ এসব বিশ্বাস করবে বলুন?আপনাদের ড্রাইভারজীও ঘটনাটা জানে। আমার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল কেন রতনজী ঘরটা নিতে বারন করেছিলেন।  
                                   
এরপর কিভাবে যে ফিরে এলাম তা আর মনে রাখার নয়। রাখিনি। দুঃস্বপ্ন স্মৃতি দ্রুত মুছে ফেলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। হঠাৎ মাসদুয়েক পর বলরামের ফোন এল... ‘ ঘরটা ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত।কাল থেকেই কাজ শুরু হবে।আপানারাই শেষ রাত কাটিয়েছেন ওই ঘরে তাই ভাবলাম খবরটা দিই। নমস্কার স্যর,ভালো থাকবেন।পারলে আরেকবার ঘুরে যান, এবার আশাকরি আর কোন অসুবিধা হবে না’।                      
Jhaalmuri Winter Special 2016


Read the full magazine here: 







Saturday, January 16, 2016

Jhaalmuri Winter Special 2016 published

Jhaalmuri Winter Special 2016 is published

Visit our website to read the e-magazine and share it with your friends






Happy reading !!!!!!!
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...