Saturday, June 20, 2015

Tear Drops

The room was full of light and death entered through the open windows with ease. Yet I didn't cry.

I was feeling numb since the morning. Letting go is an inevitability of life. Six days back, my fifty-seven year old father had a cerebral stroke. I was only nineteen. One early morning, I was holding him in my arms, while the blocked blood cells were fighting hard to reach his oxygen-starved brain. Slowly, he became sluggish. Our family physician called a specialist who confirmed that father had a complete paralysis of his left side.

The clot in his brain had robbed him of his speech. During those last six days, I, a son and an only child, was watching helplessly, how life gets sapped out. On the second day, father had picked up his inert left hand with his good right hand. He moved the useless rings on his left hand a bit, giving a false sense of hope. It was short-lived.

For the past four years, father had been much depressed. He was waiting, in vain, to get confirmation in a superintendent's position while he was officiating in that post. The pressure was silently taking its toll on his health. In those days, blood pressure medicine was not that advanced. Before the end came, our seasoned family doctor started pumping my father's heart and abdomen area, but with no luck. Stupefied, I observed the final triumph of death, just past mid-day. Most present was crying, but not me. Relatives and friends were slowly pouring in. Ironically, my father was a clerk at the High Court, where justice is dispensed and the top brass decides if a clerk gets his confirmation as a superintendent or not. Justice never fails.

Around 2 PM in the afternoon, one close colleague of father dutifully delivered a letter for my father - his letter of confirmation!

When I put the body of my father on the pyre, I was directed to observe the symbolic rituals of applying oil, water and ghee on it. I sadly remembered my lapses as a son, when he was alive. Now it was a bit late. When I took a customary dip in the river Ganges after the cremation, past mid night, I felt a mild shiver, from fear or the ice-cold water, I wasn't sure. Still no tears.

Many years had passed. I had passed engineering, got a job and got married. Life in general was full of challenges but there were consolations too - we were blessed with the birth of our only son, source of infinite joy. Staying in the suburb, I had to commute downtown for my daily work. Once on my way back home I saw a hawker selling an English primer for fifty paisa on the local train. Our son was then barely six months old. But overexcited that I was about his future, I couldn't help buying the book. I was standing near the gate of the compartment. Some cool breeze brushed my tired eyes and temples. Suddenly I felt a delicate touch of love that I was so familiar with - the love of my father. Despite being poor, he used to bring a book for me, almost every month. Those were usually translations of some classics that had opened up the world to me, the son of a posthumously confirmed superintendent. The fifty paisa English primer for my son was about to start the cycle again.

I didn't realize when some thick drops of tear rolled down my cheeks.

Story by +Sugata Sanyal for Jhaalmuri Boisakhi




Jhaalmuri 

Monday, June 15, 2015

বিট্টুর মা 

স্কুল থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আকাশের দিকে একবার তাকালো বিট্টু। ঠাম্মা বলে আকাশে নাকি গড থাকে। ঠাম্মা আরো অনেক কিছু বলে বিট্টু কে । বিট্টু সেগুলো সব বিশ্বাস করে, কারণ ও দেখেছে সারা বাড়ির সবার মধ্যে শুধু ঠাম্মার চুল সাদা। চুল সাদা মানে ঠাম্মার বয়স সবচেয়ে বেশি, এটা ও জানে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রে করে নিল খানিক্ষণ। বিট্টুর মা আজ নার্সিংহোমে ভর্ত্তি হয়েছে। মন ভালো নেই বিট্টুর। স্কুলে আন্টি শিখিয়েছে প্রে করতে। বাড়িতে ঠাম্মা যেমন করে পুজো করে তেমন করে নয়।  তবে আন্টি এটাও বলেছে যে সব গড নাকি ইকুয়াল।  ঠাম্মার গড আর আন্টির গড দুজনেই ইকুয়াল।  বিট্টু তো রোজ দুজনের কাছেই আলাদা আলাদা করে প্রে করে। তাও বিট্টুর মা ভালো নেই, আর সেটাই বিট্টুর জীবনের সবচেয়ে কষ্টের কারণ।

এই সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট জীবনে বিট্টুর অনেককিছু আছে, গাদাগাদা খেলনা আছে, বাবার আদর আছে, নিজেদের বাড়ি-গাড়ি-বন্ধু এমনকি নিজের আলাদা বাথরুম-ওয়ালা বেডরুম আছে (যদিও ও এখনো রাতে  ভয় পায় বলে মাঝে মাঝেই মা-বাবার পাশে শোবার বায়না ধরে)। আরো একটা কারণ আছে। বিট্টু মাঝে মাঝে বিছানায় হিসি করে ফেলে।  তবে মা-এর যে আজকাল কি হযেছে বিট্টু বুঝতে পারেনা। খালি সবার মুখে শোনে মা-এর নাকি গুড নিউজ হযেছে। যদি গুড নিউজ হবে তাহলে মা আজকাল ওরকম করে বসে থাকে কেন সারাদিন? আগে মা কি সুন্দর ডান্স করত! বাড়িতে রিমিদিদি-মিমিদিদি-তিতলি-দের নিয়ে মা কি সুন্দর নাচ শেখাত! লাস্ট দুর্গাপুজোয় মা নিজে মা-দুর্গা সেজে ডান্স করেছিল। বিট্টুকে মা গনেশ সাজিয়ে দিয়েছিল। থার্মোকলের শুঁড়ওয়ালা মুখোশ পরে বিট্টু ভারী মজা পেয়েছিল। আর সবাই এসে এসে ওকে আদর করছিল। 

সেই সুন্দরী মা আজকাল কেমন দেখতে হয়ে গেছে! মোটা হয়ে গেছে মা, গোল-মত ভুঁড়ি হয়ে গেছে মায়ের। আর রোজ একটু-একটু করে ভুঁড়িটা বড় হচ্ছে। ইদানিং কালে ওটা বিশাল হয়ে গেছে। মা আজকাল শুয়ে থাকে, নয়তো বসে থাকে। মা আর আজকাল স্কুলেও দিতে যায়না। বিট্টু স্কুলবাসে বাড়ি ফেরে। ঠাম্মা দিপালীমাসীকে দিয়ে সব কাজ করায় আজকাল। দিম এসেছিল আগের সপ্তাহে। বিট্টুকে বলে গেছে মায়ের কোলে আর আগের মত না লাফিয়ে পড়তে। বিট্টুর এইরকম মা মোটেই ভাল্লাগে না।  সবাই ভাবে বিট্টু ছোট।  সে নাকি কিছু বোঝেনা। বিট্টু ঠিক জানে মা ভালো নেই।  

বিট্টুর  পাড়ায় একটা সাদা কুকুর আছে। মা তাকে মাছের কাঁটা মেখে ভাত খাওয়ায় । তার নাম হল লালি। সেই লালি নাকি বিট্টুর সাথে এক দিনে জন্মেছিল।  বিট্টু লালির সাথে খেলে । হোলির দিন পিচকিরি দিয়ে লালির গায়ে গোলাপী রং দিয়ে দিয়েছিল।  তাই জন্য মা কত বকা দিয়েছিল বিট্টু কে। বিট্টু জানে লালি কিন্তু একটুও রাগ করেনি। ল্যাজ নেড়ে নেড়ে খুশি জানিয়েছিল। সেই লালির মা কালী গত সপ্তাহে মারা গিয়ে গড-এর কাছে চলে গেল। বিট্টুর পাড়ায় যখন গাড়ি এসে কালীকে নিয়ে গেল তখন লালির কি কান্না! বিট্টু বোঝে তার মা এইবার ঠিক ওইরকম গড-এর কাছে চলে যাবে। লালিকে বিট্টু বোঝায় যে ওর মা আকাশে স্টার হয়ে গেছে। লালির শীত করলে লালি যখন কাঁদে বিট্টু ওকে পুরনো কাপড় দিয়ে চাপা দিয়ে দেয় (যদিও লালি গায়ে চাপা দেওয়া বিশেষ পছন্দ করেনা)। আর যখন লালির খিদে পায় বিট্টু ওকে ডগ বিস্কিট দেয়। লালি ল্যাজ নেড়ে নেড়ে খায়।  কিন্তু বিট্টু জানে লালি ওর মাকে মিস করে।  এবার কি বিট্টুর মা-ও স্টার হয়ে যাবে?

মা বাড়ির ডক্টর আঙ্কেলকে আর দেখায়না। মা আজ সকালে যে নার্সিংহোমে  ভর্ত্তি হয়েছে সেই নার্সিংহোমেই নতুন একটা দাড়িওলা ডক্টর আছে, ইদানিং মা তার কাছে যায়। মার এই গোল ভুঁড়িওয়ালা অসুখ বাড়ির ডক্টর আঙ্কেল ভালো করে দিতে পারেনা। বিট্টুকে ঠাম্মা বলেছে মাকে নাকি ওই দাড়িওলা ডক্টর ভালো করে দেবে। একদিন একদম শুরুতে যখন মায়ের এই অসুখটা হয়, তখনও মায়ের এত বড় ভুঁড়ি হয়নি, তখন বিট্টু এই নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিল। সে যখন ঠাম্মাকে জিজ্ঞেস করছিল যে মাকে ডক্টর আঙ্কেল বড় ইনজেকশন দিলে মা সেরে যেতে পারে কিনা, তখন দীপালিমাসী ছিল কাছেই। দীপালিমাসী শুনে হেসে বলল "বোঝো ছেলের কথা ! যেকোনো ডাক্তার দিয়ে কি পোয়াতির চিকিচ্ছে হয়?" ঠাম্মা দীপালিমাসিকে ধমকে থামিয়ে দিয়েছিল। সেদিন থেকেই বিট্টু জানে কিছু গড়বড় আছে।  'পোয়াতি' আর 'চিকিচ্ছে' এই দুটো শব্দের মানে সে জানেনা। তাকে কেউ বলেও দিলনা। স্কুলেও সে বন্ধুদের জিজ্ঞেস করবে ভেবেছিল।  কিন্তু স্কুলে জিজ্ঞেস করলেই তাকে সব্বাইকে বলতে হবে যে তার মা মরে যাবে।  সেটা ভাবলেই তো বিট্টুর চোখে জল আসে। স্কুলে বয়রা কাঁদে না, খালি গার্লরা কাঁদে। কাঁদলে সবাই তাকে গার্ল বলবে। তাই এইটাও বিট্টু করেনি। ভেবেছিল ওই দাড়িওলা ডাক্তার ঠিক করে দিতে পারবে। কিন্তু প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল ডাক্তার কিছুই করেনা। মায়ের ভুঁড়িটা বেড়েই চলেছে। কিছু খেতে পারেনা মা। মাঝে মাঝে বমি করে। আর তাতেও বাবা-ঠাম্মা-দিম-দাদাই সবাই কত্ত খুশি। কেউ মাকে ভালবাসেনা। মা সেটা বোঝেনা। 

বাবার ওপর আজকাল বিট্টু খুব রাগ করে। বাবা লাস্ট উইক বিট্টুকে বলেছে যে একটা নতুন ভাই বা বোন কিনে দেবে। বিট্টু খালি রেগে যায় এটা ভেবে। মায়ের কত অসুখ, বিট্টুর মন এমনিতেই ভালো নেই, তার মধ্যে এই ভাই-বোনের ব্যাপারটা ওর মোটেই ভালো লাগেনি। বিট্টু জানে ভাই-বোন কেনাটা মোটেই ভালো জিনিস না। তার স্কুলে ফ্রেন্ড আছে রিয়া। ওর দাদা আছে ক্লাস টু-তে পড়ে। ও দেখেছে রিয়ার বাবা রিয়াকে কোলে করে গাড়ি চাপায় আর অর দাদা পিঠে ব্যাগ নিয়ে একা একা হেঁটে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে ওঠে। ও জানে ভাই-বোন কিনলে নিজের আদর কমে যায়। ও ভেবে রেখেছে এটা নিয়ে একদিন ঠাম্মার সাথে ডিসকাস করবে। কাল সানডে, হোমওয়ার্কএর চাপ নেই আর তবলার ক্লাসের ছুটি। কাল এটা নিয়ে একটা এসপার-ওসপার করবে ভেবেছে ও।  
বাড়ি ফিরে বিট্টু অবাক হয়ে গেল রকম-সকম দেখে।  ঠাম্মা বাড়ির গেট থেকেই বিট্টুকে কোলে তুলে নিল।  আর দীপালিমাসী একগাল হেসে স্কুলবাসের ড্রাইভার কাকুকে  মিষ্টি খাওয়াতে এগিয়ে গেল। বাড়ির ভেতরে হইচই করার আওয়াজ পেল।  দিম এসেছে, দাদাই এসেছে আরো অনেক লোক।  বিট্টুকে ঠাম্মা বলল "বিট্টুবুড়ো , তোর মা একদম ভালো হয়ে গেছে। নার্সিংহোমে গিয়ে দেখবি চল। তুই অত প্রে করছিলি ভগবানের কাছে! ভগবান একটা ছোট্ট ভাইকে পাঠিয়েছে। সে এসে তোর মাকে একদম ভালো করে দিয়েছে।" 

শুনে বিট্টু খানিক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। কোনটার সাথে কোনটা মেলাতে পারল না। প্রথমেই মনে পড়ল ডক্টর আঙ্কেলের মুখ। ছোট্ট ভাই গড-এর কাছ থেকে এমন কি ওষুধ নিয়ে এলো, যা ডক্টর আঙ্কেলের চেয়েও বেশি ভালো? আবার বাবা যে কিছুদিন আগেই বলছিল ভাই বা বোন্ কেনার কথাটা, সেটাও এভাবে সত্যি হয়ে গেল! আর মায়ের অসুখ সেরে গেল? কি! মায়ের অসুখ সেরে গেছে! মা আর লালির মায়ের মত করে স্টার হয়ে যাবেনা! বিট্টুর কাছে থাকবে! বিট্টু প্রচন্ড খুশি হয়ে ঠাম্মার দিকে তাকিয়ে বলল "আমি মায়ের কাছে যাব।" শুনে ঠাম্মা তো বিট্টুকে খুব খানিক আদর করে দিল। 

ভেতরে ঢুকতেই দাদাই এগিয়ে এসে ঠাম্মার কোল থেকে ওকে নিজের কোলে চাপিয়ে নিল। দাদাই মিলিটারী তে চাকরি করত। দাদাই-এর কাছে রাইফেল আছে একটা। আর একটা পিস্তল। দাদাই খুব ব্রেভ, জানে বিট্টু।  দাদাই নাকি ফাইট করত সুপারহিরো দের মত। দাদাই বিশাল গোঁফটা দিয়ে তার গালে শুড়শুড়ি দিয়ে আদর করে দিয়ে বলল "তাহলে গ্র্যান্ডসন, এবার থেকে তুমি দাদা হয়ে গেলে!"

দিম বলল "বিট্টুর এখন তোমার কোলে উঠতে বয়েই গেছে, বিট্টুদাদা বড় হয়ে যাবে তো এইবার, ছোট্টভাই-এর ছোট্টদাদা।" কথাটা ভালো না মন্দ সেটা বিট্টু বুঝে উঠতে পারার আগেই দিম একটা বিশাল এয়ারপ্লেন ধরিয়ে দিল তার হাতে - রিমোটওয়ালা। দিয়ে বলল "চল আগে আমরা নার্সিংহোমে মাকে আর ভাইকে দেখে আসি, তারপর তুমি এটা নিয়ে খেলবে।" 

বাবা নার্সিংহোমে আছে।  সবাই নাকি ছোট্ট ভাইকে দেখেনি এখনো।  সবাই নাকি বিট্টুর জন্যই ওয়েট করছিল। বিট্টুর নিজেকে স্পেশাল মনে হলো। তার চেয়েও বড় কথা মা ভালো হয়ে গেছে। আজ বিট্টু কোনো ব্যাপারেই ঝামেলা করলো না। তাড়াতাড়ি জামা চেঞ্জ করিয়ে দিল দিম। দীপালিমাসীকে অন্যদিন জ্বালায় বিট্টু।  কারণ দীপালিমাসী খালি কর্নফ্লেক্স খেতে দেয়।  রোজরোজ দুধ আর আপেল খাওয়াতে চায়। পাস্তা বানাতে পারেনা মায়ের মত। ঠাম্মার মত ওমলেট বানাতেও পারেনা ঠিক করে। তবে আজ ম্যাগি বানিয়ে দিয়েছে দীপালিমাসী। উপরে কুচিকুচি ডিমভাজা ছড়ানো।  বিট্টু জানে এইটার নাম ম্যাগি উইদ স্ক্রাম্বল এগ। এটা ভালো খেতে। দিম খুব আদর করে করে খাইয়ে দিল ওকে। আইসক্রীম-ও পেয়ে গেল একবার চাইতেই।  কেউ কোনো গোলমাল করলো না।  ভাই কেনাটা তাহলে অতটাও খারাপ নয় মনে হচ্ছে ! মায়ের কোলে এখন লাফিয়ে পড়া যাবে নিশ্চয়ই। দিমকে নার্সিংহোমে যেতে যেতে কথাটা জিজ্ঞেস করবে ভেবে রাখল বিট্টু।

নার্সিংহোমের লবিটা ঠান্ডা আর চকচকে পরিষ্কার। রিসেপশনের আন্টি ব্লু রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছে। বিট্টুর হাসি পেল দেখে। তার মায়ের একটা ব্লু লিপস্টিক আছে। বিট্টুর বহুদিনের সখ ঐটা একবার নিজের ঠোঁটে লাগিয়ে দেখার। এইবার আজ রাতেই চুপিচুপি লাগিয়ে দেখবে। ঠাম্মা বলেছে যে মা ভালো হয়ে গেলেও আজ বাড়ি ফিরবে না। দু-চার দিন নার্সিংহোমে থাকবে। তাহলে এই সুযোগ। 

তিনতলায় একটা কেবিনে একটা বেডে মা শুয়ে আছে। দেখেই কষ্ট হলো বিট্টুর। মা একটা লাইট গ্রীন রঙের ড্রেস পড়েছে, গায়ে ঢাকা দিয়ে শুয়ে আছে। চোখদুটো ক্লান্ত। হাতে একটা পাইপ লাগানো। আর সেটা ব্যান্ডেজ দিয়ে লাগানো রয়েছে। যদিও বোঝা যাচ্ছে যে মায়ের সেই বিশাল গোল ভুঁড়িটা আর নেই, তাহলেও কি মা ভালো হয়ে গেছে? বিট্টু যেতেই মা একগাল হেসে প্রচন্ড খুশি হয়ে কাছে ডেকে নিলো। বিট্টু ছুটে গিয়ে মার হাত ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো "মা, সবাই বলল তুমি ভালো হয়ে গেছ! " মা বলল "হাঁ বিট্টুসোনা, আমি তোকে আমার কাছে দেখেই ভালো হয়ে গেছি। আমার সব অসুখ সেরে গেছে". বিট্টুর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে মা শুয়ে শুয়েই ওকে জড়িয়ে আদর করে বলল "এখানে জোরে জোরে কাঁদতে হয়না সোনা, ওই দ্যাখ পাশের বেডের আন্টি ঘুমিয়ে আছে, ওর কষ্ট হবে।"  বিট্টু তাকিয়ে দেখল পাশের বেডের আন্টিটা ঘুমোচ্ছে আর তারও মায়ের মতই অসুখ করেছে, পেটে বিশাল ভুঁড়ি। মা হেসে বাবাকে বললো "যাও ওকে দেখিয়ে আনো। " বাবা ওকে কোলে তুলে বলল "চল দেখবি চল"

পাশের ঘরে সারবাঁধা অনেকগুলো বেবিকট। বাবা গিয়ে বারো নম্বর কটের সামনে নিয়ে গিয়ে বলল "বিট্টু, আজ থেকে এইটা তোর ভাই, তোর এক্কেবারে নিজের ভাই। ও তোর সাথেই থাকবে, তোর পেছন-পেছন ঘুরবে, খেলবে তোর সাথে আর তোকে অনেএএএএএক বেশি ভালবাসবে'। এক্কেবারে তোর নিজের জিনিস ও, কেউ ওকে তোর থেকে নিয়ে নেবে না।" খানিক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো বিট্টু। 

কোল থেকে নেমে বিট্টু ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল কটের দিকে। ভাই ! এইরকম ছোট্ট, একেবারে এত্তটুকুন! কটটাও খুব ছোট কিন্তু ভাইটা আরো অনেক অনেক ছোট। লালচে লালচে কপাল, চোখদুটো একবারে কুঁচকে বন্ধ করে রাখা, লোমলোম চুল মাথায়, ফোঁটা ফোঁটা পায়ের আঙুল। অবাক হয়ে দেখতে দেখতে বিট্টু হাত বাড়িয়ে ছুঁতে গেলে বাবা একজন নার্সকে ইশারা করে কি যেন বলল। নার্স এসে বিট্টুর হাতে একটা জেলিজেলি ঠান্ডা মতন জিনিস মাখিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল "এবারে তুমি ওকে টাচ করতে পারো "

অবাক-অবাক চোখে তাকিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিল বিট্টু। এইবার ভয় করছে ওর।  এত ছোট মানুষ আগে কখনো দেখেনি ও। প্রথমে খুব আস্তেআস্তে একেবারে আলতো করে একটা আঙুল দিয়ে ছুঁলো। কেমন খেলনা-খেলনা ব্যাপার, কিন্তু ছুঁলে মানুষ-মানুষ অনুভুতি। বিট্টু এইবার একটু সাহস করে হাতটা রাখল অর গায়ে। অজানা হাতের স্পর্শ পেয়ে ছোট্টটা কেঁদে উঠলো বিড়ালছানার মত আওয়াজ করে। কুরকুর করে পা দুটো আর মুঠো করা হাত দুটো নড়ে উঠলো। বিট্টুর ভিতরে একটা অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল সঙ্গেসঙ্গে, একটা অজানা অনুভূতি। এটা তো চাবি-দেওয়া বা রিমোট ওয়ালা খেলনার মত নয় ! এটা তো সত্যিকারের মানুষ, তুলতুলে নরম, ছোট্ট একটা ডলের মত মানুষ। আবার বাবা বলল যে এটা নাকি বিট্টু র নিজের জিনিস! তাকে অনেক ভালবাসবে? সত্যি সত্যি একটু একটু করে তার চোখের সামনে এই ভাই-ও একদিন তার মতন থ্রী এন্ড হাফ ইয়ার্স ওল্ড হয়ে যাবে ! 
নিজের অজান্তে বিট্টু-র মুখ দিয়ে ওর স্কুল-ফ্রেন্ড ইয়শ চাউহান-এর বাড়ি বার্থডে পার্টি তে গিয়ে নতুন শেখা একটা শব্দ বেড়িয়ে এলো ---- "গুড্ডু"

আজ থেকে বিট্টু-র আরেকটা নতুন সম্পত্তি হলো - তার ভাই, গুড্ডু।


Story by +Sahana Das Bhattacharjee for Jhaalmuri Boisakhi



Jhaalmuri 

Thursday, June 11, 2015

দেখা যাক

যেন কবিতা একটা... দেখা যাক...
২ বলে চাই ৭ রান... দেখা যাক...
ট্র্যাফিক লাইট এর আর ২ সেকেন্ড... সামনে গাড়ি চার... দেখা যাক...
সিনেমা শুরু হবে এখনি... ব্ল্যাকে টিকিট আছে কি? দেখা যাক...
কাল anniversary ...বউ এর আশা ছুটি নি ... দেখা যাক...
বাস এর ফুটবোর্ডে ঝুলছি... টিকিটের টাকা নেই... টিকিট?... দেখা যাক...
দিন দিন মোটা হচ্ছি... ডায়েটিং-এর প্ল্যান... সামনে কষা মাংস... দেখা যাক...
ঠাণ্ডায় কাঁপছি... হাতে আইসক্রিম... ঠাণ্ডা লাগে লাগুক... দেখা যাক...
ম্যাসেজটা delivered ... reply আসেনি... দেখা যাক...
কফি শপে as promised... কফি ও এসে গেছে... তুমি? দেখা যাক...
cross country দৌড়চ্ছি ...নিঃশ্বাস হুপ হাঁপ... কমপ্লিট হবে কি? নাকি লাস্ট?... দেখা যাক...
গীটারে একটা গান... অনেক চেষ্টা করেও দুটো লাইন... দেখা যাক...
ফুটবল... টান টান ম্যাচ... সামনে ফাঁকা গোল... দেখা যাক...
কার্নিশে একটা ছোট্ট বেড়াল... হাতটা প্রায় ছুই ছুই... দেখা যাক... 
জরুরী সেই মিটিং ... সেইতাতেই লেট... বসের মুখ ভার... দেখা যাক...
পুজোর প্রস্তুতি... কমিটির মিটিং... ফান্ড টান টান...
আর বিশাল বিশাল প্ল্যান... দেখা যাক...
দিনে সব সময়... সব কিছু তেই... একটা আশা... দেখা যাক

Poem by +DIGBIJAY BANERJEE for Jhaalmuri Boisakhi




Jhaalmuri 

Thursday, June 4, 2015

বৈশাখ

লম্বা লম্বা পা ফেলে,
ক্রমশ বড় হতে থাকা দিন
এগিয়ে আসছে।
দ্বিধাহীন প্রেমে এলোমেলো চাদরটা,
আর দিনের শুরুতে
আমার পাশে জাগবেনা।
উত্তর থেকে মন কেমন করা শুকনো হাওয়া,
আঙুলকে রিক্ত করে চলে যাবেনা আর।
ময়দানে ঝুপ করে কালচে অন্ধকার,
বেড়ালের মত অতর্কিতে
মাটির দিকে দেবেনা ঝাঁপ।
দক্ষিণ থেকে জেগে উঠবে,
ভালবাসার হাওয়া।
পশ্চিমে কালো মেঘের যুবতী শরীরে,
গর্ভসঞ্চার করে বৃষ্টি দেবে হঠাৎ বিদ্যুৎ।
বিবর্ণ দুপুরে নির্জন রাস্তার দীর্ঘশ্বাস,
সঙ্গে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া রোদের
আগুনে এসে দাঁড়াব।
আর ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলেকে যেভাবে দেখে মা,
তেমন করে দেখব আর একটা বাংলা নববর্ষ।
উত্তরে আরও দূরে সরে,
হিমালয় পেরোতে পেরোতে,
কেউ জন্ম নেওয়া গাছের নতুন পাতায় লিখে যাবে,
বৈশাখ এই শহর ছুঁচ্ছে।

Poem composed by +Sayan Chakraborty for Jhaalmuri Boisakhi






Jhaalmuri 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...