Monday, February 1, 2016

সম্রাট ও সুন্দরী


শীতের দুপুরে পুরো উঠোন ঝলমলে রোদে ভরে আছে। আর সেই উঠোনে সম্রাট ও সুন্দরী ছুটে বেড়াচ্ছে। একবার বাইরের বারান্দায় তো একবার পুকুর পারে, কখনো বা রান্না ঘরে ঢুকছে আর কখনো মিনির পেছনে ছুটছে। বাড়ির সবচেয়ে আদরের তারা। জেঠিমা ওদের জন্য দুধ জাল দিচ্ছে, মাছের দুটো বড় পিস ওদের জন্য কড়া করে ভেজে রাখছে। মেঝকা ওদের জন্য বল নিয়ে আসছে।

সারাদিন খেলা, দুষ্টুমি আর দৌড়ে বেড়ানো। বাড়ির কারো এতে আপত্তি ছিল না। কেবল মাত্র ঝুমঝুমি দিদা ওদের সহ্য করতে পারত না। সম্রাট- সুন্দরী দিদার সামনে আসলেই চেঁচিয়ে উঠত “ধাক্কাখাউরা দূর হ!!”

ঝুমঝুমি দিদা এ বাড়ির ভাড়াটে। তার ছেলে ভোলার সাথে পুকুর পারের পাশে দুটো ঘর নিয়ে থাকে। রেশন কার্ড এ দিদার নাম সরলা বালা দেবী। কিন্তু সে ঝুমঝুমি নামেই পরিচিত। কারণহল তার অদ্ভুত বাতিক। পোস্টম্যান দিপক পাল ভুলে ভুলে মানি অর্ডার এর খাম টা হাতে ঠেকিয়ে দিলে সে গালাগাল দিয়ে পুকুর পারে গিয়ে দু বালটি জল ঝম ঝম করে ঢেলে নেবে গায়ে। কাক মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলে আবার ঝমঝম, সুলেমান মালি নারকেল গাছ থেকে নারকেল পেড়ে রেখে দিয়ে গেলে  আবার ঝমঝম – ঝমঝমের লিস্ট আর শেষ হওয়ার নেই – সেই থেকেই নাম পরে গেল ঝুমঝুমি দিদা। সম্রাট -সুন্দরী ও দিদার পেছনে লাগবে। দিদা ডালের বড়ি উঠোনে শুকোতে দিলেই হল – সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে চলে যাবে কুলোর ওপর দিয়ে।  তারপরেই সেই বিকট চিৎকার - “ধাক্কাখাউরা দূর হ!!” হাতের সামনে যা কিছু পাবে দিদা ছুড়ে দেবে ওদের উপর। এইভাবেই কেটে যাচ্ছিল সম্রাট ও সুন্দরী এবং ঝুমঝুমি দিদার শীতকাল।

সে এক দিনের ঘটনা। ভোলা মায়ের সাথে তর্কাতর্কি করে সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরল। এমন মাঝে মাঝেই হত। দিদা জানত এ রাগ বেশীক্ষণের নয়। রাতে আবার সে ফিরে আসবে। তাই দিদা গুসা ভাঙানর জন্য ভোলার প্রিয় কাতলা মাছের ঝাল ও শিদল চাটনি বানিয়ে রাখল। রাতে দিদা চোখে ভালো দেখতে পায়না। হ্যারিকেন জালিয়ে রান্না ঘরের পাশে বসে ঠাকুরের নাম জপছিল। তখনি সে পুকুর পারে শব্দ পেল। ভাবল ভোলা ফিরেছে। “কি রে ভুলা, আইসস নি?” কোনও উত্তর নেই। তাহলে রাগ এখনো কমে নি। রান্না ঘরের দরজা খুলে দিয়ে দিদা অন্ধকারে একটা ছায়া মতন দেখতে পেল। “পুকুর পারে কিতা কররে, আয় ঘরো আয়। হাত পা ধুইয়া খাইতে আয়। “ ছায়া মূর্তি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রান্না ঘরের দিকে এগোল। কোণে গোবর রাখা ছিল। ব্যাস, ধড়াম করে পরলেন পা পিছলে। দিদা তো রেগে আগুন – “দেখতে পারস না নি – কানা নি রে?? যা জল ঢাইল্যা আয়।”   

চুপচাপ সে পুকুরে ধুয়ে ঘরে ঢুকল। দিদা ভাত বেড়ে রেখেছে। সে খাওয়া শুরু করল। হঠাৎ দিদার খটকা লাগল। ভোলা কে কেমন যেন লাগছে। দিদা আবার চেঁচাল – “ভুলা, আমার চশমাটা নিয়া আয়” কোনও উত্তর নেই। সে খেতে ব্যস্ত। তারপরেই ঘটনাটা ঘটল। হুরমুর করে ছুটে এসে সম্রাট ও সুন্দরী ছায়া মূর্তির ওপর ঝাপিয়ে পরল। আর তাকে কে বাচায়। আঁচড়ে কামড়ে অবস্থা খারাপ। ঝুমঝুমি দিদা তো পুরো থ। চ্যাঁচামেচি শুনে বাড়ির সকলে ছুটে এলো। হাবু চোর ধরা পরল। দিদা কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছছেন। সম্রাট ও সুন্দরী আবার দৌড়ে চলে গেল বাইরের বারান্দায়। কিছুক্ষণ পর ভোলা ফিরে এলো।  

পর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শোনা গেল ঝুমঝুমি দিদার বিকট ডাক “ওই ধাক্কাখাউরা তরা কৈ গেলি রে? এইদিকে আয়” এক বাটি দুধ এনে দিদিমা উঠোনে রাখলেন। সম্রাট ও সুন্দরী গুটিসুটি এসে বাটির পাশে বসল। দিদা নরম সুরে বললেন “ আর আমার বড়ি মারাইস না বুঝছস” দুধ চাটতে চাটতে মিনির প্রিয় বিড়াল ছানা দুটি বলল “মিঁয়াওও”।



Jhaalmuri Winter Special 2016


No comments:

Post a Comment

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...