Sunday, October 13, 2013

পূজো গিফ্ট

                      
অক্টোবর মাস।পুজো এসে গেছে।শীতটাও পড়ছে আস্তে আস্তে।গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হয়ে ঠান্ডাটাকে যেন ঘরে নিমন্ত্রন করে নিয়ে আসছে।পাড়ার চৌরাস্তার মোড়ে বন্ধুমহল সঙ্ঘের পুজোর প্যান্ডেল চলছে রাত্রিবেলাতেও।এবার বাজেট নাকি পচিশ লাখ।কিন্তূ বৃষ্টিটা সব ম্যাসাকার করে দিয়ে গেল।প্রিয়তোষদের একতলার দুটো ঘরই স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে। বাড়িওয়ালা সেদিকে নজরই দেয়না।এটা নাকি ঠিক করে নেয়া ভাড়াটের দায়িত্ত।তাই এমনই পড়ে আছে।কারন তনিমার পক্ষে তিন হাজার টাকায় সংসার চালিয়ে ঘর ঠিক করার মতো কিছু পড়ে থাকেনা।এরপর আবার সামনে পুজোর খরচ।
        প্রিয়তোষের দিকে তাকালে কষ্ট হয়।সকাল নটায় বেরিয়ে যায়।ফেরে সেই রাত দশটায়।তিনবছর বিয়ে হয়েছে ওদের।কিন্তূ প্রিয়তোষ বোধহয় একদিন কি দুদিন ছাড়া অফিস কামাই করেনি।তনিমা এমাসে খরচটা চাপিয়েছে।নিদেনপক্ষে তার মাকে একটা তাঁতসিল্ক  দিতেই হবে।আগেরবারের কাপড়তা সত্যিই তেমন ভাল হয়নি।তা নিয়ে ওর বোনেরা নাকি আড়ালে আনেক কথাও বলেছে।আসলে তিনশ টাকায় আর কত ভাল শাড়ি হয়।
        আজ প্রিয়তোষ তনিমাকে বিকেল চারটের সময় ফ্লাইওভারের মুখে দাড়াতে বলেছে।আজকে অফিসে বোনাস দেবার কথা আছে।দি ভ্যারাইটিস ক্লথ স্টোরস।এখানকার কাপড় ভাল হয়।দামটা ... যাচাই করে নিতে হবে।আবার হঠাৎ করে সূর্য জাকিয়ে  বসেছে।
-এটা কি হল।ঠিক চল্লিশ মিনিট লেট...তনিমা বোধহয় একটু রেগেই আছে।
-কিছু করার নেই।বাসটা আজ ঘুরে আসবে বলল।কন মিটিং আছে বোধহয়।কিন্তূ মাঝপথে শালার ব্যাটার বাসটা বিগড়ালো।ভাবলাম আবার অন্য বাস ধরে ৪টাকা গোনার কি দরকার।হেটেই মেরে দিলাম-তিনটাকা তো বাচলো,কি বল?...প্রিয়তোষ সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টায়।
-তিনটাকা বাচিয়ে উনি আমায় রাজপ্রাসাদে রাখবেন
হঠাৎ খোচাটা প্রিয়তোষকে একটু বিব্রত করে তুলল।তবু সামলে নিয়ে প্রিয়তোষ বলল-সরি সরি চল এবার যাওয়া যাক।
দোকানে প্রচুর ভিড়।আসলে সবাই এখান থেকেই কেনে।সেদিন পাশের বাড়ির হৈমন্তি বউদি নাকি দুটো শাড়ি কিনেছে দুমেয়ের জন্য,দুহাজার টাকা দিয়ে।এসব ভেবে তনিমাও নিজেকে কেমন অদের কাছে নিজেকে ছোট ভাবে।
দোকানদার অনেক রকম শাড়ি দেখাচ্ছে।সবই চয়েসফুল।টাকা থাকলে সবই কিনে নিয়ে যাওয়া যাবার মত।সামনে শাড়ির স্তুপ হয়ে রয়েছে।কোনো শাড়ির পাড়টা মনে হয় অন্য রঙ হলে ভাল হতো,কোনোটার আবার রংটা।কোনোটার আবার সবকিছু ভাল হয়েও শেষ যায়গায় এসে মার খেয়ে যাচ্ছে।টাকা।তবু দুটো চয়েস হয়েছে তনিমার।একটা সাতশো,আরেকটা সাড়ে আটশো।
-দুটোর মধ্যে কোনটা ভাল বলত?
-দেখতে ভালতো দুটোই।দাম কত?-প্রিয়তোষের কাছে দামটাই আসল কথা।
-সাতশ বলছে,আর এটা সাড়ে নশো।
-কিন্তূ এত অনেক বেশী হয়ে যাবে।তাহলে তো বাড়িতে কিছু টাকা পাঠানো মুশকিল হয়ে যাবে।
-তাহলে তুমিই পছন্দ কর।তোমার মত নিরস মন নিয়ে শাড়ি কিনতে আসা যায়না।
দোকানে সবার সামনে হট করে কথাটা বলে ফেলল তনিমা কথাটা।
-প্রিয়তোষ হেসে উড়িয়ে দিয়ে হাসতে হাসতেই বলল-কিন্তূ টাকাটাও তো ম্যাটার করে।
সঙ্গে সঙ্গে তনিমা দোকান থেকে উঠে বেরিয়ে এল।দোকানদার অপ্রস্তুত হয়ে ডাকতে লাগল-কি বউদি কিনবেনা?
-আপনার দাদাকে বলুন।
-তিন চারটে ইয়ং ছেলে বোধহয় কিছু কিনতে এসেছিল।সুযোগ পেয়ে বলে বসল-দাদা বোধহয় এসির হাওয়া খেতে এসেছেন।
      বাড়ি গিয়েও ওদের  র থেকে অনেক রাত অবধি আওয়াজ পাওয়া গেছে।তনিমা বলতে লাগল-বিয়ে করার সময় মনে ছিলনা কথাগুলো? কোনো দায়িত্ত পালনের ক্ষমতা যখন নেই তখন আমাকে কেন, কোনো অনাথ আশ্রম থেকে কাওকে ধরে এনে বিয়ে করলেই পারতে।
প্রিয়তোষ ভাবছে আজ কেন উঠছে কথাগুলো।কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় যেদিন ভিজে গায়ে হেটে যাওয়া মেয়েটাকে ছাতা এগিয়ে দিয়েছিল সেদিনই কি ভাবা উচিত ছিল আরো বেশি করে-না সেতো কিছু ভাবেনি।কিন্তূ রিলেশনটা গড়িয়েছে অনেক দুর।তনিমারা বিত্তবান।ওর বাবা ব্যাঙ্কের ম্যানেজার।তনিমার বাড়ি থেকে মেনে নিতে পারেনি।প্রিয়তোষের তখন কিই বা দাম ছিল,সামান্য একটা মেডিক্যাল রিপ্রেসেনটেটিভ।তবু ভালবাসাই হক বা সাময়িক আবেগেই হোক তনিমা বাড়ি ছেড়ে বেরেইয়ে এসেছিল একেবারে।প্রায় একবছর ওর বাড়ি থেকে মেনে নিতে পারেনি।পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে গেছে।

পরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে প্রিয়তোষ ওই দোকান থেকেই সাড়ে সাতশ টাকা দিয়ে শাড়িটা কিনে নিয়ে এল।কিন্তূ ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।মাঝে একবার বেরিয়ে ছিল।মধুদার দোকান থেকে চা খেয়ে এল।ফ্লেকের প্যাকেটটাও শেষ হয়ে গেছিল।আজ আর ফ্লেক না।একটা ক্লাসিকই কিনল।আবার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল।রাত ১১টা অবধি দরজা বন্ধ দেখে ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খোলা হল...
    একটা লোক যেন অনেক চিন্তা মাথায় রেখেও নিশ্চিন্ত মনে চলে গেছে আনেক দূরে।পুলিশ আসছে।পোস্ট মরটেম হবে ,কোনো সুইসাইডাল নোট নেই যে তনিমা খাটের পায়ার কাছে মাথে খুটতে খুটতে বলছে "আমিই খুনি।আমিই ওকে মেরেছি।আমায় নিয়ে যান,ফাঁসী দিন আমায়।"
    সবকিছুর আয়োজন করে শ্মশানে নিয়ে যেতে একটু দেরীই হয়ে গেল পরদিন।ইলেক্ট্রিক চুল্লীতে সব যেন খুব তাড়াতাড়িই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।পাড়ার বন্ধুমহল ক্লাবের ছেলেরা ম্যাটাডোরে ফিরছে ...হই হই করে।কাওকে ভাসান দিয়ে এল ।তনিমারা ফিরছে ট্যাক্সি করে।তিনবছরে এই প্রথম্বার।ফ্লাইওভারে উঠবে ট্যাক্সিটা।
দি ভ্যারাইটিসের সামনে চোখে পরল-বড় বড় করে লেখা..."আজ থেকে পুজার কেনাকাটায় ৪০% ছাড়।"
মার শাড়িটা বিছানার ওপরই পড়ে আছে...পুজোয় কি আর দেবে ওটা......

Authored by Rajib Chowdhury

No comments:

Post a Comment

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...