সময়টা ছিল নভেম্বর মাস , ট্রেন
যখন কাঠগুদাম হয়ে লালকুও স্টেশন এ থামল , তখন সকাল । চারিদিকে স্নিগ্ধ রোদজ্বল , ঠান্ডা
পাহাড়ি পরিবেশ । সেখান থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে সোজা পাড়ি দিলাম চৌখরি । লালকুও
থেকে চৌখরি এর দুরত্ব অনেকটা , প্রায় ২১৬ কিলোমিটার । আঁকাবাঁকা সবুজ পাহাড়ি পথ বেয়ে ষত ওপরে উঠবেন ততই মুগ্ধ হবেন , আর মাঝে মাঝেই চোখে পরবে পাহাড়ের কোলের সুন্দর সাজানো রিসর্ট ও ফুলের বাগান । চৌখরি
থেকে পাতাল ভূবেনেস্বর মন্দিরের দূরত্ত মাত্র ৩৬ কিলোমিটার । মন্দির দর্শন এর জন্য এখানে এক
দুই রাত্রি হল্ট করাটা সবচেয়ে ভালো উপায় |চৌখরি উত্তরাখন্ডের পিথরাগার জেলের একটি ছোট্ট
সাজানো গ্রাম ।
প্রকৃতি তার অপার সৌন্দয যেন
এখানে উজাড় করে দিয়েছে । এখানে ভোরে ঘুম ভাঙে পাহাড়ী নানা নাম না জানা পাখীর মিষ্টি
ডাকে আর আবির আলোর ছোআই । যতদূর চোখ যাবে তত দূরই বিস্তৃত ঘন সবুজ রঙের পাইন, ফার
,রডড়েনড্রন ও ওকের জঙ্গল, আর তার পরেই চির তুষারাবৃত হিমালায় বিরাজমান।
হিমালয়ের পান্চাচুল্লি অর্থাৎ হিমালয়ের বিখাত্ সর্ব্বোচ পাঁচটি চূড়া এখান থেকে এতই কাছে
এবং স্পষ্ট যে , যেন
মনে হয় হাথছানি দিয়ে ডাকছে ।
আপনার বিভোর হযে চেয়ে থাকার
কোন এক ফাঁকেই সূর্যিমামা বারফের রুপোলি চাদর ভেদ করে সারা আকাশকে মিষ্টি রোদের ছোযয
ভরিয়ে তুলবে । আর সেই সূর্যের আলোই মনে হবে কে যেন রুপোলি মুকুটে সোনার জল চড়িয়ে দিয়েছে
।

দাঁড়িয়ে আছি ,ভাবছি ঢুকবো
। একজন গাইড এসে বলল এখান দিয়ে প্রবেশ করতে হবে গুহায় , এক সেকেন্ডের জন্ন্য সবাই এর-ওর
মুখের দিকে চাইছে ,কিছুই বুঝতে পারছি না কোনখান দিয়ে ঢুকব। হতাত ই দেখি সামনে একটা
সংকীর্ণ অর্ধগোলাকার গর্তের মতো ,ভিতর থেকে ক্ষীন লাইটের আভা দেখা যাচ্হে ।অতি নাকি
পাতাল ভুবনেশ্বর দেবলোকে প্রবেশের একমাত্র পথ। সবে বলতে যাচ্ছি -"আমি যেতে পারব
না এত ছোট বাচ্চা নিয়ে
",আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে গাইড ও তার পাশের একজন ভদ্রলোক যা বললেন তাতে আমার
মনকে টলিয়ে দিল।বললেন -"এত কাছে এসে ভাববেন না যে ঢুকবো না, এই দেবলোক চারধাম
মহাতীর্থ ভ্রমনের -পুন্যের সমান,বাচ্চাকে নিয়েই যান । দেখবেন আপনার মেয়ে খুব সুখী হবে
"। আমার মেয়ে তখন ১ বছর ৭ মাসের ,মায়ের মন তো ,আর কোনো বাধাই বাধা মনে হলো না
।
এখানে প্রবেশের পথ অত্যন্ত
সংকীর্ণ ,আর খুব ক্ষীন আলো সারা গুহাতে বিক্ষিপ্ত ভাবে বিরাজমান ,চেন ধরে আস্তে আস্তে
খুব সাবধানে গুহায় নীচে প্রবেশ করতে হয়,মানে হয় এই গুহায় সাতটি তল আছে ।আজ পর্যন্ত
কোন মানুষ প্রথমতলের নীচে যেতে পারেননি । প্রধান গুহাপখ থেকে আরও অনেক গুহা আছে ।বলা
হয় এই গুহার একটি পথ শেষ হয়েছে কেদারনাথের আদি শন্কারাচার্যের মন্দিরের কাছে ।এখানে
পর্যটকদের ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ ।

পবিত্র সব পুরান সংক্রান্ত
চরিত্র,আছে স্তেলাগমাইটের দ্বারা সৃষ্ট শিবলীন্গ,যা
আজ বেড়ে চলেছে উচাতায় । পুরানে কথিত আছে গনেশের মুন্দচেদদের পর যতক্ষণ না অন্য কারোর
মুন্ড পাওয়া যায় ততক্ষণ সেই মুন্দহীন দেহকে সজীব রাখতে ভোলা মহেশ্বর ফোঁটা ফোঁটা চরনামেত্র
ঢেলে ছিলেন ।
একইসঙ্গে স্তেলাগটাইটও স্তেলাগমাইটের
দ্বারা সৃষ্টি পৌরানিক কাহিনীর নিপুন নিদর্শন আপনাকে বিভোর করে দেবে ,গাইড প্রতিটি
চরিত্রের ব্যাখা খুব সুন্দরভাবে করে দেবে ।
পাতাল দেবলোক ঘুরে পুজো দিয়ে
যখন ফিরছি বারবারই চোখে ভেসে উঠছিল অপূব সেইসব সুক্ষ সৃষ্টিকলাপ আর একটাই
প্রশ্ন মনে জাগছিল এও কি সম্ভব?
By Urmita Ghosh
No comments:
Post a Comment
Please share your valuable feedback