নাম
গোগোদা। পেশায় পাড়া তথা এলাকার ডন।ভোট এলে কলার তুলে মাস্তানি।আর সারা বছর রক্তদান
শিবিরের মুখোশের তলায় রক্তচোষা তোলাবাজি।কলকাতার তথাকথিত পেষক দলের মত ইনিও শোষক
দলের সাথেই রঙ পাল্টান।কলকাতার বুকে আতসবাজি বিষম খেলেও তোলাবাজি তুলোর মত পেশম গতিতে
বিদ্যমান।গোগোদার আসল নাম গোবিন্দ গোসাই দাস।বাবা ছিলেন বৈষ্ণব।গোগোদা নামটা
কোত্তেকে এসেছিল তা কেউ জানেনা।
পুজোর
বাজার মন্দা।চিটফান্ডের কোম্পানীগুলো স্পন্সরশিপের দরজায় ছি্টকিনি তুলে দেবার পর
সব পুজোতেই কস্ট কাটিঙ্গের বাহার।তার মধ্যেও কিছু পুজো থাকে নামি লোকের দামি
অহঙ্কারের মত।সেই পুজোগুলোর জৌলুস চেনায় সেই পুজো কর্তাদের কলারের রং।গোগোদার পুজো
মানে ভাই ভাই সঙ্ঘের পুজোও তার মধ্যে একটা।স্থানীয় কিছু জামাকাপড়ের দোকান আর
বিখ্যাত এক হোসিয়ারী কম্পানির থেকে কিছু টাকা ঢুকেছে।গোগোদার ব্যাপ্তির কাছে তা
সামান্য।সারাবছর দোনলা মেশিনটার দাদাগিরিতে লক্ষ্মী এলেও এই পুজোর ব্যাপারে
গোগোদার সেন্টিমেন্টটা এক্তু বেশিই।বাড়ি বাড়ি চা৺দা তুলতে বেরোয় সে নিজেই।
আজও তেমনি একটা রবিবার।আর সাতদিন বাকি আছে পুজোর।গত একমাস ধরে
কাটা রসিদগুলো থেকে কালেকশন করতে হবে।গোগোদা তার দক্ষিনহস্ত ক্যাকা মানে ক্যালানে
কার্ত্তিক কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।রিসেশনের যে বাজারে দেবী ভক্তির ব্যাপারেও
কন্সটিপেশণ টেনে আনবে তা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে।সকাল থেকে যে বাড়ীই
যাওয়া হচ্ছেনা কেন ১০-২০ টাকা কম নিয়েই বেরতে হচ্ছে।তিন
রাস্তার মোড়েই বাড়ি বটদার।নাম বটব্যাল মুখার্জী।পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।ভুরির সাথে
টাকাও সমানুপাতে বেড়ে চলেছে।এ পাড়ায় বেশ নামি লোক।দেশে বিদেশে প্রায়স্য নাকি
লেকচার দিয়ে বেরতে হয় তাকে।সস্ত্রীক মেয়েকে নিয়ে থাকেন পেল্লায় জাহাজের মত
বাড়িটাতে।
বাড়ির দরজায় এসেই গোগোদা হাক পাড়ে।ভিতর থেকে বটদার বেশ রাসভারী
গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।মালটা ফোনে ঠুকছে কাকে কে জানে! নিজের মনেই স্বগোতোক্তি করে গোগোদা।দশ মিনিট দাঁড়িয়ে গোগোদার
মাথার পারদ চড়চড় করে উঠতে শুরু করে দিয়েছে।অবশেষে বেরোলেন বটব্যল।
- ও গোবিন্দ । সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছ
মায়ের নামে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে । শ্লেষ মাখানো সুরে বলেন বটদা। গোগোদার মেজাজটাকে
আরও খিচুড়ি বানানোর জন্য এই যথেষ্ট ছিল তবু সামলে নিল গোগোদা।
-পুজোর চাদা দাদা ।তুলতে তো হবেই।
-হুমম। তা কত?
-১০০১ টাকা।
-খেপেছ নাকি।আমার টাকা তোমার মত রাস্তায়
দাঁড়িয়ে জামার কলারে রুমাল ঘসে আসেনা বুঝলে।সকাল সকাল তোলাবাজি।
-ক্যাকা যথাসময়ে ছড়িয়ে দিল “তো রুমাল
হাতে নিয়ে দারিয়ে আসে নাকি বস?”
-মাইন্ড ইয়উর ল্যাঙ্গুয়েজ।আমার টাকায় মদ
এর মোচ্ছব করতে দেবনা এই ভদ্র পাড়ায়।
গোগোদা
নিজের মনে নিজেকে সামলাতে থাকে।ততক্ষনে নাটক দেখতে অনেক লোক্ ই জড়ো হয়ে গেছে।
গোগোদা পকেটে হাত দিয়ে মেশিন টাকে নারাচাড়া করতে থাকে “ ব্রিজ বাড়ি সবই ত গঙ্গা
পারের বালি দিয়ে চালিয়ে দিলেন দাদা।তো এই পূজোর চাদাটাতে নাই বা বালি মেশালেন”
এতটা
কড়া সত্য বটব্যল বোধ হয় আন্দাজ করতে পারেন নি।সবাইকে অবাক করে সে হঠাৎই গোগোদার
গালে আঘাত টা করে দেয়।সব উৎসাহী গল্প লেখকের চোখ অপেক্ষা করতে থাকে আইসবারগের
টাইটানিক গ্রাসের মুহুর্তের।গোগোদাও ব্যাপারটার আকস্মিকতায় কিছুটা
বিভ্রান্ত।ক্যাকা গোগোদাকে টেনে বের করে নেওয়ার চেষ্টায়।গোগোদা শুধু বলে যায় ভালো
হলনা দাদা,ভালোনা একদম ভালো হলনা।
গতকালের
ব্যাপারটা গোগোদাকে মুষড়ে দিয়েছে অনেকটা।অনেক লোকজন নাকি হাসি ঠাট্টাও করেছে
তারনামে। এই অপমান সে মেনে নেবেনা।বটদাকে শেষ করে দিতে হবে।সারাদিন ধরে সে ভাবতে
থাকে তার প্ল্যান।এমনভাবে সে নেবে এই প্রতিশোধ যাতে বটব্যল কোনদিন তার সামনে আর
দাড়াতে না পারে।শুধু চাই একটা মাস্টার প্ল্যান।চাইলেই সে তেতুলতলার পেছনের মাঠে
গুম করে দিতে পারে।কিন্তু তা সে করবেনা।সে সবার আড়ালে নিজের অপমানকে মিটিয়ে
দেবেনা।বটব্যালকে সে শেষ করবে তার নিজের তাবেদারদের সামনে।কিন্তু কিভাবে?একটা সিগারেট নিয়ে ছাদে পায়চারি করতে করতে তার চোখ পড়ে
লাইটপোস্টে বাধা কাট আউট টার দিকে।আগামী ষষ্ঠীতে বিশড়পাড়া নাগরিক সমিতির
উদ্বোধন।প্রধান অতিথি বটব্যাল মুখার্জী।এক মনে তাকিয়ে থাকে গোগোদা।তারপর মুচকি
হেসে নেমে আসে সে।বটব্যাল কে শেষ করতে হবে সেদিন ই।সবার সামনে।
নিজের ঘরে এসে সে খুজে বের করে তার কাছে থাকা এই মিশনের সব
অস্ত্র, যা দিয়ে সে মিটিয়ে দেবে বটব্যালকে।তবু শান্তি
পায়না সে।ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।সারাদিন গোগোদাকে অনেক অচেনা অজানা লোকের সাথে কথা
বলতে দেখা গেছে। মনপসন্দ মেশিনটা একটা প্লাস্টিকে পুরে সে বেরিয়ে এল খুপরি দোকানটা
থেকে।
ইতিমধ্যে লোকজনের সাথে কথা বলে সে জেনে নিয়েছে বটব্যালের
সূচী।নাগরিক মঞ্চের উদ্বোধনের সময়ই সেরে ফেলতে হবে কাজটা।সবার সামনে নিশঃব্দে চলে
যেতে হবে বটব্যাল কে।
আজ ই সেই দিন।গত ৫দিন ধরে গোগোদা নিজের মনেই কষে চলেছে অকাল
বধের ছক।কোনমতেই নিষ্কৃতি নেই বটব্যালের।সবার অলক্ষ্যেই সে পৌছে গেছে
সভাঘরে।বটব্যাল এক সুতোয় টান দিয়ে সুচনা করবেন অনুষ্ঠানের।গোগোদা প্লাস্টিক থেকে
জিনিষটাকে বের করে সেট করে দিল পর্দা র সাথে।কোন ভুল নয়।ধীরে ধীরে ভিড় জমতে শুরু
করেছে।গোগোদা একটা ব্যবস্থায় খুশি হতে পারেনা।তার চাই আরও নির্মম পরিনাম।মিউজিক
সিস্টেমে সে বসিয়ে দিয়ে আসে সে তার ২য় অনু বোমাটাকে।সবাই কে সে শোনাবে বটব্যালের
প্রতি শনিদেবতার অট্টহাস্য।
বটব্যল এসে গেছে।গেটের দরজায় মালা চন্দন দিয়ে তাকে স্বাগত
জানাল এক সুন্দরী তরুনী।আর প্রতীক্ষা করার মত অবস্থায় নেই গোগোদা।কথা বলতে বলতে
এগিয়ে আসছে বটব্যল সভাঘরের দিকে।এসে গেছে সেই সন্ধিক্ষণ।মিউজিক বক্সের পেছন থেকে
সে দেখতে চায় সেই পরিণাম।বটব্যল এগিয়ে আসে সুতো টেনে পর্দা উন্মোচনের জন্য।হাত
রাখে সুতোর গাছায়।গোগোদা নিজের মনে একবার সরি বলে চোখ রাখে মিউজিক সিস্টেম
অপারেটরের দিকে।দুটো কাজ ই একসাথে করতে হবে।বটব্যল টান দেয় সুতোয়।কাপরের পর্দা
খুলে তার গায়ে মুখে ছড়িয়ে পরে প্যাকেট ভর্তি বিশঠা।আর এম পি থ্রি প্লেয়ার টাতে
বেজে ওঠে “আজা ঠুমকা লাগালে বন বেশরম ! দিল খোলে সিনা তানে বন বেশরম।“
গোগোদা একটা সিগারেট ধরিয়ে হাটতে থাকে ।মুচকি হেসে।
No comments:
Post a Comment
Please share your valuable feedback