Sunday, November 9, 2014

ভালোবাসা খারাপবাসা

হোস্টেলের ঘরে বসে জানলা দিয়ে একটা বড় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিহারের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। আজ সকালবেলাই ও ঠিক করেছিল অতনুর সাথে ও আর কোন সম্পর্ক রাখবেনা। অতনু যে শুধু ওকে ঝেনা তাইনা, অতনু ওকে কতটা ভালবাসে তার ওপরও সন্দেহ হতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে অতনুকে ছেড়ে থাকাও নিহারের পক্ষে সম্ভব নয়


অতনুর সাথে নিহারের এক আকাশ পার্থক্য। অতনুর আর নিহারের কোনোদিন কোন ব্যাপারে মতের মিল হয়ে না। কেন যে ওরা কাছাকাছি এসেছিল, কেন যে ওরা পরস্পরকে ভালবেসেছিল, সেটাও একটা বড় জিজ্ঞাসা নিহারের কাছে। অথচ ওদের ভালোবাসার বয়েস পাঁচ বছর। আর সম্পর্কের বয়েস বোধহয় হিসাব করা যাবেনা, নিহার ভুলেই গেছে কবে ওর অতনুর সাথে পরিচয়ের শুরু



গত তিন মাস অতনু নিহারকে একটাও ফোন করেনি, এমনকি নববর্ষ, ভালেন্তাইন'স ডে কোন কিছুর শুভেচ্ছা জানায়নি। নিহার চিঠি লিখেছিল কয়েকটা, উত্তর আসেনি। ফোন করতে পারেনি, কারন ওদের ফোন নেই। ভেবেছিলো আকাশকে একটা ফোন করে জানতে চাইবে কি হয়েছে অতনুর। কিন্তু অতনু পছন্দ করেনা ওদের সম্পর্কের সম্বন্ধে কেউ জানুক। সত্যিই তো, এই গত পাঁচ বছরে কেউ জানেনি ওদের সম্পর্কের কথা। কেউনা, এমনকি মিনাও না। যে মিনাকে নিহার ওর সমস্ত কথা না বলে সস্তি পায়না, সেই মিনাও না। সবাই জানে ওরা 'just' বন্ধু। অবশ্য ওরা 'just' বন্ধুই তো, শুধু বন্ধু কখন বঁধু হয়ে গেছে বোঝা যায়নি না নিহার ভাবতেই পারেনা ওর জীবন অতনুকে ছাড়া, অথচ অতনু কেন আজকের দিনেও একটা ফোন করছে না? আজ যে বড্ড স্পেশাল দিন। কোন বছর তো এরকম হয়না! আজকের দিনেই নিহার ওর জীবনের সব থেকে সুন্দর, সব থেকে দামী উপহারটা পেয়েছিল - অতনুকে। আজ ওদের anniversary , আজ নিহারের জন্মদিন। তবে কি অতনু নিহারকে ভুলে গেছে?



ভীষণ কান্না পাছে আজ, কিন্তু তপতি আর রানু ঘরেই আছে। কাল একটা ক্লাস টেস্ট আছে তাই সব মন দিয়ে পরছআর নিহারের সামনে খোলা বইয়ের প্রতিটা অক্ষর মাঝে মাঝেই ঝাপসা হয়ে যাছে। না নিহার কাঁদবে না, কেন কাঁদবে ও অতনুর জন্য? যে ওকে এতদিন ভুলে থাকতে পারে!



"হেই নিহার! Happy birthday ইয়ার!" নিহারের ভাবনায় বাধা পড়লো। কোন ক্রমে চোখের জল সামলে পিছনে তাকিয়ে বলল "Thanks বিশাখা! তোরই প্রথম মনে পড়ল, আমার roommate গুলোতো ভুলেই মেরে দিয়েছে।" নিহারের কথা শুনে রানু বই ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "দেখ নিহার, এই ভাবে আমাদের অপবাদ দিবিনা। কাল তোর জন্য চারটে দোকান ঘুরে gift কিনেছি, তোকে লুকিয়ে কষ্ট করে gift wrap করেছি। রাত জেগে তোর ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষা করেছি, তারপর তোর মাথার কাছে gift রেখে দিয়েছি। সকাল থেকে উঠে তো তুই মুখভার করে এক চোখ জল নিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বসে আছিস। একবারও ফিরে দেখেছিস আমাদের দিকে? এদিকে আমরা হা-পিত্যেশ করে বসে আছি, তুই কখন দেখবি! আর এখন আমাদের দোষ দিছিস?"



নিহার সত্যিই দেখেনি ওর মাথার কাছে table-এ একটা বাক্স রাখা আর কার্ড রাখা আছে। রানুর কথা শেষ হতেই ও বিছানা থেকে উঠে gift দুটো তুলে নিল, তারপর wrap টা খুলে ফেললো। একটা পর্সিলিনের মূর্তি, তিনটে মেয়ে ফল কুরাছে। একটার হাতে ঝুরি, একটার কোঁচড়ে ফল আর একটা শুধু দাঁড়িয়ে, ভারি সুন্দর। তারপর আরকি, সবাই মিলে নিহারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। তারপর স্নান খাওয়া করে কলেজ গেলো। বিকালে আজ পার্টি!



সারাটা দিন ভাবার সময় পায়নি নিহার। কলেজ-সবাই মোটামুটি একবার করে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছে। নিহারের মিষ্টি স্বভাবের জন্য ওকে বোধহয় গোটা কলেজ ভালোবাসে। বিকালে কলেজ থেকে হোস্টেল -এ ফিরেছে, তারপর সবাই মিলে একটা রেস্তরাঁতে খাওয়া দাওয়া করেছে, আড্ডা মেরেছে। মস্তি করেছে, তারপর রাতের দিকে হোস্টেল -এ ফিরেছে সবাই মিলে



ঘরে ঢুকে বসে ওরা তখন কথা বলছে দিনটাকে নিয়ে এমন সময় তাপসী, নিহারের থেকে এক বছরের জুনিয়র, একটা চিঠি দিয়ে গেল নিহারকে। বলে গেল, একটা ছেলে নাকি ঘণ্টা খানেক বসে ছিল ওর জন্য, তারপর চিঠিটা দিয়ে চলে গেছে। নিহারের মনে তখন ...



ঘরের পরিবেশ একটু শান্ত হবার পর নিহার চিঠিটা খুলে বসলো



নিহার,



কি লিখবো জানিনা, গত কয়েক মাস ভেবেও বুঝে উঠতে পারিনি কি বলব বা লিখব। তাই -- আমি আর পারছিনা, তুইও জানিস আর আমিও জানি আমাদের সম্পর্ক আর continue করা সম্ভব না। আমাদের কোথাও মিল নেই, কোথাও না... অনেক ভেবেছি জানিস। তিন মাস শুধু ভবেছি, ভাবতেও পারছি না তোকে এ ভাবে চিঠি লিখতে হচ্ছে, ভেবেছিলাম আজ তোর সঙ্গে দেখা করে তোকে বলবো ।আমি জানিনা, আমি কিচ্ছু জানিনা। please তুই আমাকে বুঝিস, আমি জানি তুই আমাকে বুঝবি। আমি আর পারছি নারে এই মেকীত্ব টেনে নিয়ে যেতে এক বছর হলো আমি তোর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করছি। এমনকি ভালবাসাতো দুরের কথা, বন্ধুত্ব - feel করতে পারছিনা। I don't love you anymoreপারলে ক্ষমা করিস, আমি তোর যোগ্য নই  

                                                                                                                                        - অতনু


সে রাতে নিহার আত্মহত্যা করে। কেউ জানতে পারেনি কারণটা, ও চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলেছিল



না গল্পটা এখনো শেষ হয়েনি। তিন দিন পরে খবরের কাগজে আরও একটা খবর পরেছিলাম - ছোট খবর;



কলকাতা, ৬ই মার্চ  কলকাতার নাকতলা অঞ্চলে অতনু ব্যানার্জি (২২ বৎসর) নামক একটি ছেলে আত্মহত্যা করেছে ছেলেটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ছিল। 



ঘটনাটির প্রকৃত কারন জানা যায়নি, তবে মৃত্যুর আগে শেষ চিঠিতে অতনু লিখে গিয়েছে "ক্ষমা করিস নিহার, দিনটার কথা আমার মনে ছিলনা।" পুলিশ সন্দেহ করছে, প্রণয় ঘটিত কোন কারণই এই মৃত্যুর কারণ। কিছুদিন আগে শিলিগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ -এর তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রি নিহারিকা প্রামাণিক একইভাবে আত্মহত্যা করেছিল। 

Composed by +sharmistha dey for Jhaalmuri Puja Special 2014




No comments:

Post a Comment

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...