Friday, May 29, 2015

মন খারাপের দিস্তা




কাল সকাল থেকেই আকাশটা মুখ ভার করে আছে. আর এরই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে আমার মেজাজটাও। এমনি দিনগুলোর জীবনযাত্রা তথা কর্মব্যস্ততা এই লড়াইতে ততোটা ইন্ধন জোগাতে পারেনা, কিন্তু বাড়ি থেকে প্রায় ১৭০০০ মাইল দূরে এখানে আমার অফুরন্ত সময়, চিন্তা ভাবনা আর বিশ্লেষণের। আর এই জিনিস টাই উস্কে দিয়ে যায় স্মৃতির অগোছালো আলমারিটাকে।

       আচ্ছা তোদের মনে পড়ে সেই কলেজ স্ট্রীটের ধেনোর সরবতের দোকানটার কথা , যেখানে আমরা সামান্য বরফের টুকরো ছোঁড়াছুড়ি মাধ্যমে কৈশোরের উত্তাপ নিতাম, আর ধেনো ওই প্রচন্ড গরমে হাসিমুখে আমাদের তেষ্টা মিটিয়ে যেত দিনের পর দিন। শুনেছি শেষ সময়ে ওর মুখে জল দেওয়ারও কেউ ছিল না।

      মনে পড়ছে ওই বরফ ছোড়া গ্রুপের অভীককে. হাসি খুশি ছেলেটা সাহস জুগিয়েছিল সেই স্কুলের ছাদে বসে সিগারেট ধরানোর। সেই দিন যেন, স্কুলের ছাদের ওই সিঁড়িটাতেই একটা ছোটখাটো বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল। অবাক লাগে যখন শুনি অভীকের সেই সাহস নাকি জীবনের গতির কাছে নতি স্বীকার করে। আমার কিন্তু আজও ওই অভীকের দেখানো সাহস টুকুই সম্বল! 

     সিগারেটের কথা থেকেই অমুর একটা ডায়লগ মনে পরে গেল! ও বলত কলেজে পড়ার সময় ৪ বন্ধু মিলে ১টা সিগারেটে কাউন্টারে খেতে হত। কিন্তু তাতে একটা প্রাণের স্পর্শ ছিল। আজ ১প্যাকেট সিগারেট কেনার ক্ষমতা আছে সবার, কিন্তু সময়টা নেই ৪ বন্ধুর একসাথে হওয়ার! সেই অমুর কবিতার হাতটা ছিল দারুন। কলেজের অনেক মেয়েই পাগল ছিল ওর কবিতার। দক্ষিন ভারতে ভালো চাকরির অফার পেয়ে যেদিন ও চলে গেল, খুব দুঃখ হয়েছিল। আসলে ও ছিল আমার প্রতি সন্ধ্যের উল্টোডাঙ্গা ফুটব্রিজের সঙ্গী। দুটো লেবু  চা আর ২-৩টে ফ্লেক দিয়ে অনায়াসে কেটে যেত আমাদের ৩-৪ ঘন্টা। তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে নিজ নিজ জীবনের ব্যস্ততায়। খুব দেখতে ইচ্ছে করে অমুকে। ও কলকাতায় এলে এখনো কি উল্টোডাঙ্গার ফুটব্রিজটায় আসে কখনো? অপেক্ষা করে আমার জন্য?

   লাল্টুদার দোকানের একটা মস্ত বড় ভূমিকা ছিল আমাদের সেই তারুন্যে। বলশেভিক থেকে ৯/১১, সৌরভ থেকে চ্যাপেল, আবার বাম- ডান রাজনীতি আমাদের সব আলোচনার-ই সাক্ষী ওই দোকান। ভাড়ের চা আর সিগারেট-এ উঠত বিতর্কের তুফান। প্রেম নিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ টিপস, আবার ব্যর্থ প্রেমিককে সান্ত্বনা প্রদান সব-ই পাওয়া যেত. লাল্টুদা ছিল নির্বাক শ্রোতা। আমাদের মধ্যে কোনদিন কেউ প্রয়োজন বোধ করিনি লাল্টুদার বক্তব্য শোনার। বাতাসে উড়ন্ত লোভনীয় টিপস গুলো একটাও বোধহয় কাজে আসেনি লাল্টুদার! ওই দোকান টা আজ আর নেই! তুলে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওখানে কলেজের ঝা চকচকে ক্যান্টিন হবে! যার তলায় চাপা পড়ে থাকবে কিছু তরুনের হৃদয়ের স্পন্দন।
     
    হৃদয় মানেই তো কিছু না বলা কথা, কিছু না শোনা শব্দ! জীবন বিজ্ঞান ক্লাসের সেই চশমা পরা মেয়েটি! মনে হয়েছিলো  ও কিছু বলতে চেয়েছিল আমায়! আমিও কিছু বলতে চেয়েছিলাম হয়ত। কিন্তু গল্পের নির্দিষ্ট প্রথা মেনেই কেউই আর কাউকে কিছু বলে উঠতে পারিনি। আবার ধর প্রেসিডেন্সি-র মেয়েটি, কত সুন্দর সময়, কত স্বপ্ন, কত রাস্তা চেনা, কত রাত জাগা, ফোন কল-এ। অথচ হঠাৎ-ই কেমন অচেনা, অগোছালো করে দিয়ে গেল। নিরুত্তর কিছু প্রশ্ন রেখে দিয়ে গেল বাস্তবের বুক চিরে!! আমার খুব ভালো লাগত জানিস ওই পরন্ত বিকেলে কফি হাউস এর সামনেটায় লুকিয়ে লুকিয়ে ওর কৌতুহলী, বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি টার আস্বাদন নিতে। আমার খুব ভালো লাগত যখন বাড়ি ফেরার ভাড়া টা দিয়ে দুজনে মিলে এক গ্লাস সরবতে ভবিষ্যতের স্বপ্নের জাল বুনতাম, আর তারপর কিছু অবাস্তব কল্পনায় মেতে উঠে মৌলালি থেকে হেটে বাড়ি ফিরতাম। আমার আজও খুব জানতে ইচ্ছে করে, ওর সেই কৌতুহলী চোখ কি আর কফি হাউসের সামনে দাড়ালে একবারের জন্যও আমায় খুজবে? 

     বাবার বন্ধুর মেয়েকেও মনে পড়ছে ভীষণ, যাকে সেই হাত ধরে সাইকেল শিখিয়েছিলাম, রোজ বিকেলে ছাদে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছিলাম, একটি বার পাশের বারান্দায় যদি দেখা পাওয়া যায় এই ভেবে! ওইই প্রথম আমায় শিখিয়েছিল অসুর্য্যম্পশ্যারূপা কথাটির মানে। রোজ সকালে ওর জলে ভেজা মুখটা , কপালের চুল থেকে নেমে আশা জলবিন্দু গুলো, যার উপর সূর্যের প্রথম রশ্মিটা পড়ে একটা স্বর্গীয় সৌন্দর্যের ছটায় ভরিয়ে দিত আমার মনের উঠোন টা, আর তারপর? তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি। আচ্ছা মেয়েটি কি কোনো একটা মুহুর্তের জন্যও আমার কথা ভেবেছিল? জানিনা, কোনদিন জানতে পারবনা।

    আসলে ব্যাপারগুলো বোধহয় মেট্রো-র সেই ঘোষিকার মতন! যার সুমধুর কন্ঠস্বর আমাদের নিত্যসঙ্গী কিন্তু তার পরিচয় টা সারাজীবন অধরাই থেকে যাবে। ডাক্তার বলেছে আমার যে আর ৬ মাস. এখানেও কেনোর কোনো উত্তর নেই! আসলে এই উত্তর গুলো পেয়ে গেলে হয়তো জীবনটা উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন হয়ে পড়ত!

Story by +Nirabhra Ghosh for Jhaalmuri Boisakhi




Jhaalmuri 

1 comment:

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...