Thursday, August 6, 2015

নীহারিকা

নীহারিকা আমার পাশের বাড়ির মেয়ে, অনেকটা “মেরি সামনে ওয়ালি খিড়কী’র মতো।
আমার জীবনে তখন শুধুই নীহারিকা-
                   যেমন সকালে চায়ের উষ্ণ স্পর্শে,
                           ঠিক তেমনি রাতের জ্যোৎস্না-র মাধুর্যে।
আমি তখন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখা এক প্রাণচঞ্চল যুবক,
                   আর নীহারিকা? সে তখন সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো এক ষোড়শী।।

আমার ঘরের জানালা দিয়ে নীহারিকা’র সদর দরজাটা দেখা যেত।
আমাদের দালানের ঘড়িটা যখন ঢং ঢং করে দশবার বিকট আওয়াজ করে থামত,
নীহারিকা সেই সিংহদুয়ার খুলে রাস্তায় পা রাখতো, স্কুলের পথে।
ঘাড় ঘুরিয়ে ও কি দেখত একবার, আমার জানালার দিকে?
                   'নাহহহ…ওটা আমার মনের ভুল বৈ আর কিছু না।।
এইভাবেই দিন কাটছিল, বলব বলব করেও মনের কথা বলা হচ্ছিল না নীহারিকাকে।

একদিন কলেজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়, পাড়াটা একটু থমথমে লাগলো।
                  সন্ধ্যে হয়ে গেছে, অথচ… নীহারিকা’র বাড়ি কেন অন্ধকার?
কৌতূহল বশত জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলাম,
                 পাশের বস্তির একটা ছেলে, নিজের বিকৃত কামার্ত লালসা মেটাতে না পেরে
                 অ্যাসিড ছুড়ে দিয়ে গেছে নীহারিকা’র মুখে।।

কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল নীহারিকা,
                যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে।
পাড়ার গুরুজনরা বলছেন, দোষ নাকি নীহারিকার’ই,
               নাহলে পাড়ায় এত মেয়ে থাকতে নীহারিকা কেন?
আমি তীব্র প্রতিবাদ করতে চাইলাম, চিৎকার করে বলতে চাইলাম,
                         নাআআ, নীহারিকা খারাপ নয়।
কিন্তু আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হোল না,
              স্রোতের বিপরিতে গিয়ে নীহারিকা’কে কলঙ্ক মুক্ত করতে পারলাম না।।

সেই দুর্ঘটনার পর অনেক সাহস সঞ্চয় করে, সমাজের কটাক্ষ উপেক্ষা করে,
নার্সিংহোমে গিয়ে যখন নীহারিকা’র পাশে দাঁড়ালাম,
নীহারিকা ওর কুঁকড়ে দুমড়ে যাওয়া মুখটা নিয়ে, আরও কুঁকড়ে গেল।
আমার হাত ধরে, ওর চোখের জল আর বাঁধ মানল না।
              বললাম –“ভয় কি? আমি আছি তো…”,
                       বুঝলাম, আমার মনের ভুলটা ভুল ছিল না।

এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে, নীহারিকা’র বাড়ীতে আর কেউ থাকে না।
নিজেদের সন্মান বাঁচাতে ওরা এই পাড়া ছেড়ে চলে যায়।
কিন্তু সন্মান হানি হল কার???
নীহারিকা’র পরিবারের নাকি নারীকে তার মর্যাদা দিতে না পারা এক অকর্মণ্য সমাজের?
             যে নিজের দায় এড়াতে দোষের ভাগী করল সেই নারীকেই???

আমার দালানের ঘড়িটা ঢং ঢং আওয়াজ করে মধ্যরাত্রি ঘোষণা করলো।
সানাইের সুর থেমে গেছে,
আমার ঘরের জানালা দিয়ে, নীহারিকা’র পুরনো বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি দুজনে,
            আমি আর নীহারিকা।


Composed by Moumita Ghosh Ball for Jhaalmuri Barsha




Jhaalmuri 


No comments:

Post a Comment

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...