শৈলশহরটির
নাম করিব না। এটুকু বলিলেই যথেষ্ট,
সেখানে আমাদের একটা বাড়ি ছিল। আমার
পিতৃদেব মজলিশী লোক ছিলেন, একটা
বড়সড় সরকারী চাকুরীও করিতেন। তাঁহার ইচ্ছা ছিল,
অবসর লওয়ার পরে সকলে মিলিয়া সেই
শৈলগৃহে বাস করিবেন । কিন্তু বিধাতাপুরুষ উল্টা বুঝিলেন,
অবসর লইবার পূর্বেই তাঁহাকে তাঁহার
প্রয়োজন পড়িল। মাস ছয়েকের ভিতর তিন দিনের
জ্বরে মা-ও তাঁহার অনুগমন করিলেন। ছোট বোনটি আরও বছরখানেক টিঁকিয়াছিল,
একদিন অসাবধানে সিঁড়ি দিয়া নামিতে
গিয়া তাহার পা ভাঙিল, সে
আর সুস্থ হইল না।
বাড়িতে
আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ীদের ভীড় কমিলে মনে পড়িল,
আমি বিবাহ করি নাই এবং আমার ব্যাঙ্কে
বেশ কিছু টাকা আছে । অতএব, আমি
একজন মুক্তপুরুষ। ভাবনাটা ক্রমশঃ জোরালো হইয়া উঠিলে মনে হইল,
কোথাও চেঞ্জে যাওয়া দরকার। পরদিনই
টিকিট কাটিলাম এবং তাহারও সপ্তাহখানেক পরে লটবহর সমেত রাত্রির ট্রেনে চড়িয়া
বসিলাম।
খাইয়া
আসিয়াছিলাম, ট্রেনে
উঠিয়া বিছানা করিয়া শুইয়া পড়িলাম। গলা অবধি কম্বল টানিয়া একটা ডিটেকটিভ উপন্যাসে
মনোনিবেশ করিলাম। একটা দারুণ লোমহর্ষক স্থানে আসিয়া পড়িয়াছি,
এমন সময় কে যেন ডাকিল,
'আরে,অমরদা
যে !'
বিরক্তি
চাপিয়া চাহিয়া দেখি, কলেজের
নরেন । সে আমার চেয়ে বছরতিনেকের ছোট,
কলেজে থাকিতে নাটকের দলে মাঝেমধ্যে
একসঙ্গে অভিনয় করিয়াছি।কলেজ ছাড়িবার পরে তাহার সহিত যোগাযোগ ছিল না,
আজ এতদিন বাদে আবার দেখা ।
বই
বন্ধ করিয়া উঠিয়া বসিলাম। নরেন সামান্য মোটা হইয়াছে,
রংটা আগের চেয়ে ময়লা,মাথার
সামনের চুল ইতিমধ্যেই পাতলা হইতে আরম্ভ করিয়াছে। কিন্তু মুখের হাসিটি একই রকম আছে
।
জিজ্ঞাসা
করিলাম, 'কোথায়
যাওয়া হচ্ছে ?'
খানিকটা
অপ্রস্তুত হইয়া বলিল 'এই
একটু বেড়াতে - ইন্দু, এদিকে
এসো।' একটি
হাস্যমুখী বধূ উল্টোদিকের সীটে বসিয়াছিল,
উঠিয়া আসিয়া নমস্কার করিল। জানা গেল,
আমার এবং উহাদের গন্তব্য একই ।
হাসিয়া
জিজ্ঞাসা করিলাম, ' তাহলে
হনিমুনে চলেছ বল !'