Thursday, October 9, 2014

পূজোর প্রাপ্তি

গল্প ১
মিতার মনে আজ খুশীর জোয়ার। রোজের একঘেয়ে সংসার-র কাজ আজ গুণগুণ সুরের ছোঁয়ায় সারা হয়ে যাচ্ছে। পূজোর আর দু সপ্তাহ বাকি।এবরের পূজো আনন্দে কাটবে আশা করছে । পাপণের হাফইয়ারলি পরীক্ষার ফল ভালো হোয়েছে,সপ্তমীর দিন দাদারা আসছে নাগপুর থেকে, আর সবচেয়ে বড় কথা তার কাজ পাগল স্বামী তপণ সেই জন্য চারদিন ছুটি নিয়েছে ।মাসকাবারি খরচ থেকে টুকটাক সরিয়ে রেখে হাজার দুয়েক টাকা জমিয়েছে মিতা,মোটামুটি একটা জামদানি শাড়ী হয়ে যাবে ।আজ শাড়ী ব্যাবশায়ী শ্যামা কে বলা আছে, নিয়ে আসবে ।কলিং বেল বাজতে ঠীকে ঝী কমলির মা ঘরে ঢুকল।চারদিন কামাই এর পর আজ আসাতে মিতা ভেবেছিলো খূব বকা দেবে ।ঊল্টে হাঊহাঊ করে কাঁদতে কাঁদতে মিতার পায়ে পড়লো সে । “কমলির বাবার খুব অসুখ, এখুনি হাসপাতালে না দিতে পারলে বাঁচবে না।যা টাকা ছিল সব খরচ হয়ে গেছে বউদি ,যেভাবে হোক কয়েকটা টাকা দাও” বিচলিত মিতা বলে “কোথায় পাবো টাকা আমি ?...কমলির মা কেঁদে যায়‌, অসহায়তা বোধহীন করে দিয়েছে তাকে ।এটাই তার শেষ ভরসার জায়গা। মিতা দ্রুত ভাবতে থাকে কোথায় পাবে সে টাকাটা ।তপনকে বলে লাভ নেই ,একটা টাকাও সে দেবে না। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে ঊঠলো ,ফুটে ঊঠলো শ্যামার নাম। যেটা দেখেই মিতার ভাবনায় ঝিলিক দিয়ে এলো ঊপায়। কলটা রীসীভ করে ঠাণ্ডা গলায় মিতা বলে “শাড়ীটা আমি এখন নিতে পারছিনা শ্যামা ।পরে জানাব তোমাকে....”।টাকাটা নেওয়ার সময় ছলছল চোখে কমলির মা দেখল মিতার চোখ চিকচিক  করছে ।   

গল্প ২
অনু ছুটছে ,সাড়ে ৫টার বারাসাত লোকাল ধরতেই হবে তাকে । চাকরি পাওয়ার খবরটা মাকে নিজের মুখে শোনাবে।অভাব অনটনের সংসারে মাসে ৮হাজার টাকা এই পুজোর মুখে মাকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত করবে।বাবা মারা যাবার পর সেই মায়ের একমাত্র ভরসা।পড়াটাও ছেড়ে দিতে হল যার জন্য।পঞ্চমীর সন্ধ্যার অসম্ভব ভিড় ট্রেনের দরজায় কোনমতে রড ধরে ঝুলে পড়ল অনু।উল্টোডাঙ্গা স্টেশনে ভেতরে ঢুকে যাবে এই আশায়।কিন্তু ট্রেন জোরে চলতে শুরু করলে ঘটল বিপত্তি।ভেতর থেকে এল উলটো ভিড়ের চাপ। ব্যাস ,শীর্ণ হাতের জোর পারলনা সামলাতে সেই চাপ ফস্কে গেল রড। “গেল,গেল,পড়ে গেল...”চিৎকার করে উঠলো বহু মহিলা কণ্ঠ।চেন টেনে ট্রেন থামাতে সবাই ভেবে নিল দেখবে একটা দলা পাকান শরীর ।কি্জন্ম অবাক করা ঘটনা ঘটল সবার চোখের সামনে। স্বয়ং যমের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ভাগ্যের সহায়তায় ট্রেনের দুই চাকার ফাঁক গলে দুই লাইনের মাঝে পড়ে ছিল অনু। দু তিনটে কাটা ছাড়া আর কিছু না ।“কপালের জোর”, “ভাগ্যের খেলা” ‌ইত্যাদি প্রভৃতি কথার স্রোতে ভাসতে ভাসতে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা অনু ভেবে  যাচ্ছিল তার মা কোন খবরটা শুনে বেশি আনন্দ পাবে,তার চাকরি পাওয়া নাকি তার এই পুনর্জন্ম।


Composed by Anindita Das for Jhaalmuri Puja Special 2014


No comments:

Post a Comment

Please share your valuable feedback

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...